পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস বিপ্রদাস ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া বলিল, তুই আমাকে কবে যেতে বলিস ! দ্বিজদাস বলিল, আজ, কাল, পরশু —যবে হোক । আমাকে অনুমতি দিন আমি নিজে এসে আপনাকে নিয়ে যাবো । ৰিপ্রাস হাসিমুখে কিছুক্ষণ নীরবে থাকিয়া কহিল, বেশ তাই হবে। আমি মিজেই যেতে পারবো, তোকে ফিরে আসতে হবে না। দ্বিজদাস চলিয়া গেলে বনানা জিজ্ঞাসা করিল, এটা কি হলো মুখুয্যেমশাই, বাড়ি যেতে আপত্তি করলেন কিসের জন্তে ? বিপ্রদাস কহিল, কারণটা ত নিজের কানেই শুনলে ? শুনলুম, কিন্তু ও-জবাব পরের জন্যে, আমার জন্যে নয়। বলুন কিসের জন্যে বাড়ি যেতে চান না। আপনাকে বলতেই হবে । অামি ক্লাস্ত । না | না কেন ? ক্লাস্তিতে সকলের দাবী আছে, নেই কি শুধু আমার ? আপনার ও আছে, কিন্তু সে দাবী সত্যিকার হলে সকলের ভাগে বুঝতে পারতুম আমি। আর সকলের চোখকেই ঠকাতে পাবেন, পারবেন না ঠকাতে শুধু আমার চোখকে । যাবার সময় মেজদিকে চিঠি লিখে যাবে, আপনার রাগ ধরবার কখনো দরকার হলে যেন তিনি আমাকে ডেকে পাঠান । মেজদি নিজে পারবেন না রাগ ধরতে, তুমি দেবে ধরে । এ কথা শুনলে কিন্তু তিনি খুশী হবেন না। বনানা বলিল, খুশী হবেন না সত্যি, কিন্তু কৃতজ্ঞ হবেন । আমার মেজদি হলেন সে-যুগের মানুষ, স্বামী তাকে খুজে বেছে নিতে হয়নি, ভগবান দিয়েছিলেন আশীৰ্ব্বাদের মতো অঞ্জলি পূর্ণ করে। তখন থেকে মুস্থ সবল মাহুষটিকে নিয়েই তার কারবার। কিন্তু সে মানুষেরও যে হঠাৎ একদিন মন ভাঙতে পারে এ খবর তিনি জানবেন কি করে ? বিপ্রদাস কথা না কহিয়া শুধু একটুখানি হাসিল । বন্দন বলিল, আপনি হাসলেন যে বড়ো ? বিপ্রদাস বলিল, হাসি আপনি আসে বন্দন স্বামী খুজে-বেছে নেবার অভিযানে আজ পর্য্যন্ত যাদের তুমি দেখতে পেয়েচো তাদের বাইরে যে কেউ আছে তা তোমরা ভাবতে পারো না। সংসারে সাধারণ নিয়মটাই শুধু মানে, স্বীকার করতে চাও না তার ব্যতিক্রমটাকে । অথচ এই ব্যতিক্রমটার জোখেই টিকে আছে ধৰ্ম্ম, টিকে আছে পুণ্য, আছে কাব্য-সাহিত্য, আছে অবিচলিত শ্রদ্ধা বিশ্বাস । এ না থাকলে পৃথিবীটা যেতো একেবারে মরুভূমি হয়ে। এই সত্যটাই আজও জানো না। } > *