পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস বন্দন ইহার জবাব দিল, বলিল, ওঁর ভাবনা খরচের সব টাকাটা যদি প্রজাদের ঘাড়ে উন্থল না হয় তো তহবিলে হাত পড়বে। এতে ভয় হবে না দ্বিজুবাবু ? সকলেই হাসিয়া উঠিল, এবং এই রহস্যটুকুর মধ্য দিয়া মায়ের মনোভারটা যেন কমিয়া গেল, স্মিত-মুখে কৃত্রিম রুষ্টস্বরে বলিলেন, ওকে জালাতন করতে তুমিও ঠিক তোমার বোনের মতই হবে বন্দনা। ও আমার পরম ধাৰ্ম্মিক ছেলে, সবাই মিলে ওকে মিথ্যে খোটা দিলে আমার সয় না । বন্দনা কহিল, খোট মিথ্যে হলে গায়ে লাগে না, তাতে রাগ করা উচিত নয় । মা বললেন, রাগ তো ও করে না,—ও শুনে হাসে । বন্দনা কহিল, তারও কারণ আছে মা, মুখুয্যেমশাই জানেন পেটে খেলে পিঠে সইতে হয়, রাগারগি করা মূখতা। ঠিক না মুখুয্যেমশাই ? বিপ্রদাস হাসিয়া কহিল, ঠিক বই কি। মূর্থের কথায় রাগারগি করা নিষেধ, শাস্ত্রে তার জন্ত অন্য ব্যবস্থা আছে 體 বন্দনা কহিল, মেজদি কিন্তু আমার চেয়ে মুধু মুখুয্যেমশাই। বোধ হয় আপনার শাস্ত্রের এই ব্যবস্থার জোরেই সবাই আপনাকে এত ভক্তি করে। এই বলিয়া সে হাসিয়া মুখ ফিরাইল। দ্বিজদাস হাসি চাপিতে অন্যত্র চাহিয়া রহিল এবং দয়াময়ী নিজেও হাসিয়া ফেলিলেন, বলিলেন, বন্দনা মেয়েটা বড় দুষ্টু, ওর সঙ্গে কারো কথায় পারবার জো নেই। একটু থামিয়া একটু গম্ভীর হইয়া কহিলেন, কিন্তু দেখো মা, কৰ্ত্তাদের আমলে প্রজাদের ওপর এ-রকম যে একেবারেই হ’ত না তা বলিনে, কিন্তু তোমাকে ত বলেচি, বিপিন আমার পরম ধাৰ্ম্মিক ছেলে, যা অন্যায়, যা ওর যথার্থ প্রাপ্য নয়, সে ও কিছুতে নিতে পারে না। কিন্তু ভয় আমার দ্বিজুকে, ও পারে। বিপ্রদাস প্রতিবাদ করিয়া বলিল, এ তোমার অন্যায় কথা মা । দ্বিজু করবে প্রজা-পীড়ন । প্রজার পক্ষ নিয়ে ও আমাদের বিরুদ্ধেই একবার তাদের খাজনা দিতে নিষেধ করেছিল সে কথা কি তোমার মনে নেই ? মা বললেন, মনে আছে বলেই ত বলছি। যে স্থায্য দেন দিতে বারণ করে, অন্যায় আদায় সেই পারে বিপিন, অপরে পারে না। দয়া-মায়া ওর আছে,—একটু বেশি পরিমাণেই আছে মানি,—কিন্তু তবু দেখতে পাবি একদিন, ওর হাতেই প্রজারা দুঃখ পাবে ঢের বেশি। ন মা, পাবে না, তুমি দেখো । দয়াময়ী কহিলেন, ভরসা কেবল তুই আছিল ব'লে। নইলে এমন কেউ নেই যে ওকে ঠিক পথে চালিয়ে যেতে পারবে। নইলে ও নিজেও একদিন ডুববে পরকেও ড়োবাবে । ১২ষ্ট و لاسوه