পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস প্ৰণাম করিয়া বলিল, মা, আমরা চললুম। আসতে আদেশ করেছিলেন, আমরা এসেছিলুম, কিন্তু থাকতে পারলুম না। কেন বাবা ? বিপ্রদাসবাবু তার ঘর থেকে আমাকে বার করে দিয়েছেন। তার কারণ ? কারণ বোধ করি এই যে তিনি বড়লোক। অহঙ্কারে চোখে-কনে দেখতে শুনতে পান না । ভেবেচেন নিজের বাড়িতে ডেকে এনে অপমান করা সহজ । কিন্তু ছেলেকে একটু বুঝিয়ে দেবেন আমার বাবাও জমিদারী রেখে গেছেন, সে-ও নিতান্ত ছোট নয়। আমাকেও ভিক্ষে করে বেড়াতে হয় না । দয়াময়ী ব্যাকুল হইয়া বলিলেন, বিপিনকে আমি ডেকে পাঠাচ্ছি বাবা, কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করি। আমার কাজ এখনো শেষ হ’লো না, ব্ৰাহ্মণ-ভোজন বাকী, বোষ্টম-ভিক্ষুকদের বিদায় করা হয়নি, তার আগেই যদি তোমরা রাগ করে চলে যাও শশধর, যে পুকুর এই মাত্র প্রতিষ্ঠা করলুম তাতেই ডুব দিয়ে মরবো তোমরা নিশ্চয় জেনো। বলিতে বলিতে র্তাহার দুই চোখে জল আসিয়া পড়িল । শাশুড়ীর চোখের জলে বিশেষ ফল হইল না। ভদ্রসস্তান হইয়াও শশধরের আকৃতি ও প্রকৃতি কোনটাই ঠিক ভদ্রোচিত নয়। কাছে ঘোঁসিয়া দাড়াইতে মন সঙ্কোচ বোধ করে। তাহার বিপুল দেহ ও বিপুলতর মুখমণ্ডল কুদ্ধ বিড়ালের মত ফুলিতে লাগিল, বলিল, থাকতে পারি যদি বিপ্রাসবাৰু এখানে এসে সকলের স্বমুখে হাত জোড় করে আমার কাছে ক্ষমা চান ! নইলে নয় । প্রস্তাবটা এত বড় অভাবিত যে শুনিয়া সকলে যেন বিশ্ময়ে অবাক হইয়া গেল । বিপ্রদাস ক্ষমা চাহিবে হাত জোড় করিয়া ! এবং সকলের সম্মুথে ! কয়েক মূহূৰ্ত্ত সকলেই নিৰ্ব্বাক, সহসা পাণ্ড-মুখে একান্ত আমুনয়ের কণ্ঠে সতী বলিয়া উঠিল, ঠাকুরজামাই, এখন নয় ভাই । কাজ-কৰ্ম্ম চুকুক, রাত্তিরে মা নিশ্চয় এর একটা বিহিত করবেন । তোমাকে অপমান করা কি কখনো হতে পারে ? অন্যায় করে থাকলে তিনি নিশ্চয় ক্ষমা চাইবেন । বন্দনার চোখের কোণ দুটা ঈষৎ স্ফূরিত হইয়া উঠিল, কিন্তু শাস্ত-কণ্ঠে কহিল, তিনি অস্থায় ত কখন করেন না মেজদি । সতী তাড়া দিয়া উঠিল, থাম বন্দন। অন্যায় সবাই করে । বঙ্গনা বলিল, মা, তিনি করেন না । - শুনিয়া মৈত্রেয়ী জলিয়া গেল, তীক্ষুস্বরে কহিল, কি করে জামলেম ? সেখানে ত আপনি ছিলেন মা । উমি কি তবে বানিয়ে বলচেন ? st