পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বন্দন বলিল, দুঃখ যেন তোমার নাই থাকে মেজদি । কিন্তু তোমার দুঃখটাই সংসারে সব নয়। তোমার কতখানি গেলে সে তুমি জানে, কিন্তু কেঁদে কেঁদে যারা চোখ অন্ধ করলে তাদের লোকসান কে পুরাবে বলো ত ? একটু থামিয়া বলিল, মুখুয্যেমশাই পুরুষমানুষ, যা খুশি উনি বলুন, কিন্তু যাবার ক্ষণে আজ শুকনো চোখে যেন তুমি বিদায় নিও না দিদি। সে ওদের বড় বিধবে । কাদের বিধিবে রে বন্দনা ? কাদের ? জানো না তুমি তাদের ? তোমার ন’বছর বয়সে এসেছিলে এই পরের বাড়িতে, সেই বাড়িতে বছরের পর বছর ধরে তোমার আপনার করে দিলে যারা, আজকের একটা ধাক্কাতেই তাদের ভূলে গেলে মেজদি ? তোমার শাশুড়ি, তোমার দেওর, তোমার সংসারের দাস-দাসী, আশ্রিত-পরিজন, ঠাকুরবাড়ি, অতিথিশালা, গুরু-পুরুত—এদের অভাব পূর্ণ হবে শুধু স্বামী-পুত্র দিয়ে ? আর কেউ নেই জীবনে—শুধু এই ? বন্দনা বলিতে লাগিল, এ কাদের মুখের কথা জানো মেজদি, যে সমাজে আমরা মানুষ হয়েচি তাদের । তুমি ভেবেচে স্বামী-ভক্তির এই শেষ কথা ? স্ত্রীর এর বড়ো ভাববার কিছু নেই? এ তোমার ভুল। কলকাতায় চলে আমার মাসীর বাড়িতে, দেখবে এ-কথা সেখানে পুরানো হয়ে আছে—এর বেশি তারা ভাবেও না, করে ও না । অথচ,-কথার মাঝখানে সে থামিয়া গেল । তাহার হঠাৎ মনে হইল কে যেন পিছনে দাড়াইয়া, ফিরিয়া দেখিল দ্বিজদাস। কথন যে সে ' নিঃশবে আসিয়া দাড়াইয়াছে উভয়ের কেহই টের পায় নাই। লজ্জা পাইয়া বন্দনা কি-যেন বলিতে গেল, দ্বিজদাস থামাইয়া দিয়া কহিল, ভয় নেই, মাসীকেও চিনিনে তার দলের কাউকেও জানিনে – আপনার কথা তাদের কাছে প্রকাশ পাবে না। কিন্তু আসলে আপনার ভূল হচ্চে । পৃথিবীতে জস্তু-জানোয়ারের দল আছে, তাদের আচরণ ফরমুলায় বাধা যায়, কিন্তু মানুষের দল নেই। এক জোটে এমন গড়পড়তা বিচার তাদের চলে না। সকাল থেকে আজ এই কথাটাই ভাবছিলুম। মাসীর দল থেকে টেনে এনে অনায়াসে আপনাকে দাদার দলে ভৰ্ত্তি করা যায়, আবার দয়ামীর দল থেকে বার করে স্বচ্ছদে ঐ মৈত্রেয়ীকে আপনার মাসীর দলে চালান করা চলে। বাজি রেখে বলতে পারি কোথাও এক তিল বিভ্রাট বাধবে না। বাঃ রে মামুষের মন । বাঃ রে তার প্রকৃতি । সতী আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, এ কথার মানে ঠাকুরপো ? দ্বিজদাস ততোধিক বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিল, তোমার কাছেও মানে ? দ্বিজুর কাজ, দ্বিজুর কথার মানেই যদি থাকবে বৌদি, এতকাল দয়ামী বিপ্রদাসের §§§