পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সতীর শ্রান্ধের কাজ ঘটা করিয়া শেষ হইল। ভিক্ষুক কাঙালী সতীসাধ্বী জয়গান করিয়া গৃহে ফিরিল, সকলেই বলিল, মুখুয্যে-বাড়ির কাজ এমনি করেই হয়, এর ছোট-বড় নেই । সকালে স্নান সারিয়া বন্দন প্রণাম করিতে বিপ্রদাসের ঘরে ঢুকিয়া বিশ্বয়ে থমকিয়া দাড়াইল—তাহার পাশে বসিয়া দয়াময়ী। ভোরের ট্রেনে বাড়ি ফিরিয়াছেন, এখনো কেহ জানে না। মায়ের মূৰ্ত্তি দেখিয়া বদনার বুকে আঘাত লাগিল। সোনার বর্ণ কালি হইয়াছে, মাথার ছোট ছোট চুলগুলি রুক্ষ, ধূলিমাখা, চোখ বসিয়াছে, কপালে রেখা পড়িয়াছে—দু:খ-শোকের এমন ব্যথার ছবি বন্দনা কখনো দেখে নাই । তাহার মনে পড়িল সেদিনের সেই ঐশ্বৰ্য্যবর্তী সৰ্ব্বময়ীকত্রী বিপ্রদাসের মাকে । ক’টা দিনই বা । আজ সমস্ত মহিমা যেন তাহার পথের ধূলায়। কাছে গিয়া প্রণাম করিয়া বলিল, কখন এলেন মা, আমি জানতে পারিনি ত । দয়াময়ী তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া চুম্বন করিলেন, বলিলেন, আমার আসার খবর কিসের জন্তে বন্দন ? তখন আসতো বিপ্রদাসের মা, তাই দেশের ছেলেবুড়ে সবাই টের পেতো। বিপিন, কাজ ত চুকে গেছে বাবা, চল না মায়ে-পোয়ে আজই বেরিয়ে পড়ি । শুনিয়া বিপ্রদাস হাসিয়া কহিলেন, তোমার ভয় নেই মা, মায়ে-পোয়ে যাত্রার বিঘ্ন ঘটবে না, কিন্তু আজই হয় না । বন্দনার বাবা আসবেন কাল, তোমার ছোটবৌয়ের হাতে সংসার বুঝিয়ে না দিয়ে যাবে কেমন করে ? দয়াময়ী অনেকক্ষণ মৌন থাকিয়া বলিলেন, তাই হোক বিপিন। সহ হবে না আমার, এমন মিথ্যে মুখে আর আনবে না। কিন্তু ক’টা দিন আর বাকি ? কেবল সাতটা দিন মা। আবার আজকের দিনেই আমরা যাত্রা শুরু করবো । বন্দনা কহিল, মা বাড়ির ভেতরে আপনার ঘরে চলুন। দয়াময়ী মাথা নাড়িয়া অস্বীকার করিলেন—তোমার এই কথাটি রাখতে পারবো না মা। যে ক’টা দিন থাকবে, এইখানেই থাকবে, আবার যাবার দিন এলে এই বাইরের ঘর থেকেই দু’জনে বার হয়ে যাবো। ভেতরে যা কিছু রইলো সে সব তোমার রইলো মা ! বন্ধন পীড়াপীড়ি করিল না, শুধু আবার একবার তাহার পদধূলি লইয়া নতমুখে বাহির হইয়া গেল । છેtrર