পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দ্বিজদাস চোখ মেলিয়া তাহার মুখের পানে চাহিল। তাহার হাতখানি নিজের বুকের উপর টানিয়া লইয়া আবার চোখ বুজিল। কোন কথা কহিল না। রবিবার ঘুরিয়া আসিল । বিপ্রদাস ও দয়াময়ীর যাবার দিন আজ। তীর্থভ্রমণ দয়াময়ীর একদিন সমাপ্ত হইবে ; সেদিন সংসারের আকর্ষণ হয়ত এই গৃহেই আবার তাহাকে টানিয়া আনিবে, কিন্তু যাত্রা শেষ হইবে না আর বিপ্রদাসের, আর ফিরাইয়। আনিবে না তাহাকে এ-গৃহে। এ-কথা শুনিয়াছে অনেকে। কেহ বিশ্বাস করিয়াছে, কেহ করে নাই । প্রাঙ্গণে মোটর দাড়াইয়া। কাছে-দূরে বাটীর সকলেই উপস্থিত। মেয়ের দ্বিতলের বারান্দায় দাড়াইয়া চোখ মুছিতেছে, বিপ্রদাস উঠিতে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, দ্বিজুকে দেখচিনে কেন ? কে একজন বলিল, তিনি বাড়ি নেই, কি-একটা কাজে বাইরে গেছেন শুনিয়া, বিপ্রদাস হাসিয়া বলিলেন, পালিয়েচে । সেটা শুধু মুখেই গোয়ার, নইলে ভৗতুর অগ্রগণ্য । বন্দনার হাত ধরিয়া দাড়াইয়াছিল বাক্ষ। বলিল, তুমি কবে আবার আসবে বাবা ? একটু শীগগির করে এসো। বিপ্রদাস হাসিয়া তাহার মাথায় একবার হাত বুলাইয়া দিলেন, এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না । বন্দনা শাশুড়ীর পায়ের ধূলা লইল । তিনি বলিলেন, বাস্থ রইলো ছোট বৌমা । আর রইলেন মন্দিরে তোমার শ্বশুরকুলের রাধাগোবিন্দজী । ফিরে কখনো এলে তোমার কাছ থেকে এদের নেবো। এই বলিয়া তিনি আঁচলে চোখ মুছিলেন। বন্দনা দূর হইতে বিপ্রদাসকে প্রণাম করিল। তারপরে কাছে আসিয়া সজলচক্ষে বাপরুদ্ধ স্বরে কহিল, কলকাতায় পূজোর ঘরে যে-মূৰ্ত্তি একদিন আপনার লুকিয়ে দেখেছিলুম, আজ আবার সেই মূৰ্ত্তিই আমার চোখে পড়লো বড়দা। আর আমার শোক নেই, ঠিকানা আপনার নাইবা পেলুম, জানি মনের মধ্যে যেদিন ডাক দেবে। আসতেই হবে আপনাকে। যতই না না বলুন, এ-কথা কোনমতেই মিথ্যে হবে না । বিপ্রদাস শুধু একটু হাসিলেন । যেমন করিয়া ছেলের উত্তর এড়াইয়া গেলেন, তেমনি করিয়া বন্দনারও। গাড়ি ছাড়িয়া দিল । 8 של