পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস করচি। তোমাদের জমিদারী অক্ষয় হয়ে থাকৃ, তুমি একটিবার মুখ ফুটে আদেশ কর, আজই উকিল ডেকে সমস্ত লেখাপড়া করে দিচ্ছি। ইনিই সাক্ষী থাকুন, দেখ অামি পারি কি না ? স্বাহেব মুখ তুলিয়া চাহিয়া বলিলেন, তোর দেওর ভয়ঙ্কর স্বদেশী নাকি সতী ? সতী বলিল, ই, ভয়ঙ্কর । তুই বললেই লেখাপড়া করে জমিদারীর অংশ ছেড়ে দিতে চায় ? সতী ঘাড় নাডিয়া জবাব দিল, ও স্বচ্ছন্দে পারে। ওর অসাধ্য কাজ নেই । • বন্দন কৌতুহল দমন করিতে পারিল না, জিজ্ঞাসা করিল, সত্যি বলচেন ? চিরকালের জন্ত বাস্তবিক সমস্ত ত্যাগ কবতে পারেন ? দ্বিজদাস তাহার মুখেব প্রতি ক্ষণকাল দুষ্টপাত কবিয়া কহিল, সত্যি পারি। ওতে আমার এক তিল লোভ নেই। দেশের পনেব আনা লোক একবেলা পেট ভরে খেতে পায় না—উদয়াস্ত পরিশ্রম করে—আর বিনা পরিশ্রমে আমার বরাদ্দ পোলাও-কালিয়া—ও পাপের অন্ন আমার মুখে রোচে না, গলায় আটকাতে চায়। ও বিষয় আমার গেলেই ভাল । তখন দেশের পচিজনের মত খেটে খেয়ে বাচি । জোটে মঙ্গল, না জোটে তাদের সঙ্গে উপেস করে মরতে পারলে বরঞ্চ একদিন স্বর্গে যেতেও পারব, কিন্তু এ-পথে কোন কালে সে আশা নেই। বদন নিপগক-চক্ষে চাহিয়া শুনিতেছিল, কথা শেষ হইতে আর কথা কহিল না, শুধু মুখ দিয়া তাহার একটি নিশ্বাস পড়িল । সতীর হঠাৎ যেন চমক ভাঙ্গিল । ঠাকুরপোর এ-ছাড়া যেন আর কথা নেই। বলে বলে এমনি মুখস্থ হযে গেছে। কহিল, পুরান বক্তৃতা পরে দিও ঠাকুরপো, ঢের সময় পাবে। সেজকাকাবাবুর হয়ত এখনও হাত-মুখ ধোয়াও সারা হয়নি। বন্দনা, চল ভাই, ওপরে গিয়ে কাপড়-চোপড় ছাডবি । সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, জামাই বাবাজীকে দেখচিনে ত ? সতী কহিল, তিনি সকালেই কি একটা জরুরি কাজে বেরিয়েচেন, ফিরতে বোধ করি দেরি হবে । বদন জিজ্ঞাসা করিল, মেজদি, তোমার শাশুড়ীকে ত দেখতে পেলুম না ? বাড়িতেই আছেন ? সতী কহিল, এখনো আছেন, কিন্তু শীঘ্রই কৈলাস মানস-সরোবরে তীর্থযাত্র করবেন। সমস্ত সকালটা পূজা-আহ্নিক নিয়েই থাকেন, আর একটু বেলা হলেই তাকে দেখতে পাবে। বন্দনা প্রশ্ন কৰিল, তিনি খুব বেশি ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্ম নিয়েই থাকেন, না ? সতী বলিল, ই ৷ }*