পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ [ রমেশ তাহার কাছে গিয়া বসিয়া একটুখানি হাসিল, কিন্তু জবাব দিল না। বিশ্বেশ্বরী পরমস্নেহে তাহার মাথায় গায়ে হাত বুলাইয়া দিয়া কহিলেন – ] বিশ্বেশ্বরী। শরীরটা কি এখানে ভাল থাকচে না বাবা ? রমেশ । এ ক্ষে থোট্টার দেশের ডাল-রুটির শরীর জ্যাঠাইমা, এ কি এত শীঘ্র খারাপ হয় ? তা নয়। তবে, এখানে আমি আর একদিনও টিকতে পারচিনে । আমার সমস্ত প্রাণ যেন কেবলই থাবি খেয়ে উঠচে । বিশ্বেশ্বরী । শুনে বঁাচলাম বাবা, তোর শরীর খারাপ হয়নি । কিন্তু এই যে তোর জন্মস্থান, এখানে টিকতে পারচিস না কেন বল দেখি । রমেশ । সে আমি বলবে না। আমি নিশ্চয় জানি, তুমি সমস্তই জান । বিশ্বেশ্বরী। সব না জানলেও কতক জানি বটে, কিন্তু ঠিক সেই জন্তেই তোকে আমি কোথাও যেতে দেব না রমেশ । রমেশ । কিন্তু এখানে কেউ আমাকে চায় না জ্যাঠাইমা । বিশ্বেশ্বরী। চায় না বলেই তোর পালান চলবে না রমেশ । এই যে ডাল-রুটি খাওয়া দেহের বড়াই করছিলি সে কি শুধু পালানোর জন্তে ? ই রে, গোপাল সরকার বলছিল কি একটা রাস্ত মেরামতের জন্যে তুই চাদ তুলছিলি । তার কি হ’লে ? রমেশ । আচ্ছা, এই একটা কথাই তোমাকে বলি। কোন পথট জান ? যেটা পোস্টাফিসের স্বমুখ দিয়ে বরাবর স্টেশনে গেছে। বছর-পাঁচেক পূৰ্ব্বে বৃষ্টিতে ভেঙে এখন একটা প্রকাও গৰ্ত্ত হয়ে আছে । লোক পা পিছলে হাত-পা ভেঙে পার হয়, কিন্তু মেরামত করে না। গোটা-কুড়ি টাকা মাত্র খরচ, কিন্তু এর জন্যে আজ আট-দশ দিন ঘুরে ঘুরেও আট-দশটা পয়সা পাইনি। কাল মধুর দোকানের সামনে দিয়ে রাত্রে আসচি, কানে গেল কে একজন আর সকলকে বারণ করে দিয়ে বলচে, তোরা কেউ একটা পয়সাও দিসনে । জুতো পায়ে মসমসিয়ে হাট, দু’চাকার গাড়িতে ঘুরে বেড়ান-ওরই ত গরজ । কেউ কিছু না দিলে আপনিই সারাবে। না করে বাবু-বাবু’ বলে একটুখানি পিঠে হাত বোলানো। ব্যস। বিশ্বেশ্বরী । (হাসিয়া ) ওরা অমন বলে। তাই দে না বাপু সারিয়ে । তোর দাদামশায়ের ত ঢের টাকা পেয়েচিস । রমেশ । ( রাগিয়া উঠিয়া ) কিন্তু কেন দেবে ? অামার ভারি দুঃখ হচ্চে যে, না বুঝে অনেকগুলো টাকা এদের ইস্কুলের জন্তে খরচ করে ফেলেচি। এ-গায়ের কারও জন্তে কিছু করতে নেই। এরা এত নীচ যে এদের দান করলে এরা বোকা মনে করে। ভাল করলে গরজ ঠাওরায় । এদের ক্ষমা করাও অপরাধ। ভাবে ভয়ে ছেড়ে দিলে । [ গুনিয়া বিশ্বেশ্বরী হাসিতে লাগিলেঙ্গ ]