পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রম! সেও হোটেল। তার পরে গেলাম ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে। সেখানে বহুকাল কাটল, কিন্তু ছেলেবেলার সেই হোটেলবাসের দুঃখ আর ঘুচল না। খেতে হও খাও,-বাধা দেবারও শত্রু নেই, এগিয়ে দেবারও মিত্র নেই । [ রম নীরব ] রমেশ । শরীর অসুস্থ, সাধ মিটিয়ে আজ খেতে পারলাম না, তবু মনে হচ্চে যেন জীবনের এই প্রথম স্বপ্রভাত, এ জীবনের সমস্ত ধারাটা যেন এই একটা বেলার মধ্যেই একেবারে বদলে গেল । রমা । ( অধোমুখে ) কি সমস্ত বাড়িয়ে বলচেন বলুন ত? রমেশ । বাড়ানোর শক্তি থাকলে বাড়াতাম, কিন্তু সে সাধ্য নেই। রম । ভাগ্যে নেই, নইলে এর বেশি শক্ত থাকলে আমাকে ছুটে পালাতে হতো। আমারও ভাগ্য ভাল যে, ঘরে ফিরে গিয়ে নিন্দে করবেন না, বলে বেড়াবেন না যে ওদের রমা এমনি যে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পেট-ভরে দুটো খেতেও দেয়নি । রমেশ । না রাণী, নিন্দে করব না, মুখ্যাতি করেও বেড়াব না । আজকের দিনটা আমার নিন্দে-মুখ্যাতির বাইরে । বাস্তবিক, খাওয়া জিনিসটার মধ্যে যে পেট-ভরানোর অতিরিক্ত আরও কিছু আছে, আজকের পূৰ্ব্বে একথা যেন আমি জানতামই না। রমা। আজই বুঝি প্রথম জানলেন ? . রমেশ । তাই ত জানলাম। রম । কিন্তু এরও ঢের বেশি জানবার আছে। সেদিনটায় আমাকে কিন্তু একটা খবর পাঠিয়ে দেবেন। রমেশ । এ-কথার মানে ? ধুম । সব কথার মানে যে জানতেই হবে, তারই বা কি মানে আছে রমেশদা ? আচ্ছা, সত্যি বলুন ত, আমাকে কি একেবারেই চিনতেই পারেননি ? রমেশ । কি করেই বা পারব বল ত ? সেই ছেলেবেলায় দেখা। ফিরে এসে ত তোমার মুখ দেখতে পাইনি। যখনি চেষ্টা করেচি তখনি হয়ত মূখ ফিরিয়ে নিয়েচ, না হয় তো অন্য দিকে চেয়ে আছ । তাই ত আজ হঠাৎ মনে হয়েছিল, এ মুখ বোধ হয় কখনো স্বপ্নে দেখে থাকব। এমন স্বপ্ন ত— রম । আচ্ছা, আপনি রাত্রে কি থান ? রমেশ । যা জোটে তাই । রমা। আচ্ছা, আপনি এত আগোছাল কেন বলুন তো ? শুনি, জিনিস-পত্ৰ কোথায় থাকে কোথায় যায়, কোন ঠিকানা নেই। কিছুর ওপরেই যেন মায়ামমতা নেই। সমস্তই যেন শূন্যে ভেসে বেড়ায়। ३३*