পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰামেৰ ভূমতি S রামলালের বয়স কম ছিল, কিন্তু দুষ্টুবুদ্ধি কম ছিল না। গ্রামের লোকে তাহাকে ভয় করিত। অত্যাচার যে তাহার কখন কোন দিক দিয়া কি ভাবে দেখা দিবে, সেকথা কাহারও অনুমান করিবার জো ছিল না। তাহার বৈমাত্র বড়ভাই খামলালকেও ঠিক শান্ত-প্রকৃতির লোক বলা চলে না, কিন্তু সে লঘু অপরাধে গুরুদণ্ড করিত না। গ্রামের জমিদারী কাছারিতে সে কাজ করিত এবং নিজের জমি-জমা তারক করিত। তাদের মবস্থা স্বচ্ছল ছিল। পুকুর, বাগান, ধানজমি, দু-দশ ঘর বাগী প্রজা এবং কিছু নগদ টাকাও ছিল। হামলালের পত্নী নারায়ণী যেবার প্রথম ঘর করতে আসেন—সে আজ তের বছরের কথা—সে বছরে রামের বিধবা জননীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি আড়াই বছরের শিশু রাম এবং এই সমস্ত সংসারটা তাহার তের বছরের বালিকা পুত্রবধূ নারায়ণীর হাতে তুলিয়া দিয়া যান। এ বৎসর চারিদিকে অত্যন্ত জর হইতেছিল। নারায়ণীও জরে পড়িলেন । তিন-চারিট গ্রামের মধ্যে একমাত্র খানিকট-পাশকরা ডাক্তার নীলমণি সরকারের এক টাকা ডিজিট দুটাকায় চড়িয়া গেল এবং তাহার কুইনিনের পুরিয়া, অ্যারাকট-ময়দা সহযোগে মুখাস্ত হইয়া উঠিল। সাতদিন কাটিয়া গেল, নারায়ণীর জর ছাড়ে মা । খামলাল চিন্তিত হইয়া উঠিলেন। বাড়ির দাসী নৃত্যকালী ডাক্তার ডাকিতে গিয়াছিল, ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আজ র্তাকে ভিন গায়ে যেতে হবে—সেখানে চার টাকা ভিজিট-আসতে পারবেন মা । খামলাল ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, আমিও না হয় চার টাকাই দেব, টাকা আগে না প্রাণ আগে ? যা তুই চামারটাকে ডেকে আৰু গে। নারায়ণী ঘরের ভিতর হইতে সে কথা শুনিতে পাইয়া ক্ষীণস্বরে ডাকিয়া বলিলেন, ওগো, কেন ভূমি এত ব্যস্ত হক্ষ ? ডাক্তার না হয় কালই আসবে, একদিনে আর কি ক্ষেতি হবে ? স্বামলাল উঠানের একধারে পিয়ার তলায় বসিয়া পার্থীর খাচা তৈরী কীিতেছিল, উঠা আসিয়া বলিল, তুই থাক নেত্য, আমি যাচ্চি । - ጳማሕ • ?