পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নারায়ণী বলিলেন, ও জানে না, আমি জানি। কিন্তু মা বুঝি তোমাকে চার-পাচ দিন ধরে ক্রমাগত ওই কথা বলে বেড়াচ্চেন ? খামলাল একটু অপ্রতিভ হইয়া ইতস্ততঃ করিয়া বলিলেন, না, উনি কিছুই বলেননি, লোকেরও ত চোখ আছে গো ! আমি নিজে কি কিছুই দেখতে পাইনে, তাই তুমি মনে কর ? নারায়ণী বলিলেন, না, আমি তা মনে করিনে। কিন্তু ওর কে আছে ? কাকে নিয়ে ও পৃথক হবে ? মা আছে, না বোন আছে, না একটা মাসি-পিসি আছে ? ওকে রোধে খাওয়াবে কে ? খামলাল বিরক্ত হইয়া বলিলেন, আমি ও সব জানিনে। মুখে বলিলেন বটে, জানি না, কিন্তু অস্তরে জানিতেছিলেন। এত বড় সত্যটা না জানিয়াপথ কোথায় ? নারায়ণী কি কথা বলিতে গেলেন, কিন্তু তাহার ওষ্ঠাধর র্কাপিয়া উঠিল। তাই কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া, নিজেকে সামলাইয়া লইয়া ভারি গলায় বলিলেন, দেখ, তের বছর বয়সে মেয়েরা যখন পুতুল খেলে বেড়ায় তখন মা আমার মাথায় এই সমস্ত সংসারটা ফেলে রেখে স্বচ্ছন্দে স্বর্গে চলে গেলেন। তিনি দেখচেন, এ ভার আমি বইতে পেরেচি কিনা। রেখেচি-বড়েচি, ছেলে মাচুষ করেচি, লোক লৌকিকতা, কুটুম্ব, সংসার সমস্ত এই একটা মাথায় বয়ে বয়ে আজ ছাব্বিশ বছরের আধ-বুড়ে মাগ হয়েচি। এখন আমার ঘর-কন্নার মধ্যে যদি হাত দিতে এস, সত্যি বলচি তোমাকে আমি নদীতে ডুব দিয়ে মরব। তখন আর একটা বিয়ে করে রামকে আলাদা করে দিয়ে যেমন ইচ্ছে তেমন করে সংসার ক’রো, আমি দেখতেও যাব না, বলতেও যাব ' মা। কিন্তু এখন নয় । শুiমলাল মনে মনে স্ত্রীকে ভয় করিতেন, আর কথা কহিলেন না। কথাট এইখানেই সে রাত্রে বন্ধ হইয়া রহিল। পরদিন নারায়ণী রামকে কাছে ঘসাইয়া গভীর স্নেহে গায়ে হাত বুলাইয়া বলিলেন, রাম, তোর এখানে আর থেকে কাজ নেই ভাই। তুই কোথাও আলাদা থাকগে যা—পারবিনে থাকতে ? রাম তৎক্ষণাৎ সম্মত হইয়া একগাল হাসিয়া বলিল, পারব বৌদি। তুমি, আমি, গোবিন্দ আর ভোলা, কবে যাওয়া হবে বৌদি ? নারায়ণী নিরুত্তর হইয়া রহিলেন । ইহার পর কি বলবেন । কিন্তু রাম কথাটা খামিতে দিল না। সে উৎসাহিত হইয়া উঠিয়াছিল, বলিল, কবে যাব বৌদি } তিনি সে কথার উত্তরে তাহার মুখটা বুকের উপর টানিয়া লইয়া বলিলেন, বোঁদিকে ছেড়ে একলা থাকতে পারবিনে ? s রাম মাথা নাড়িয়া বলিল, না । জার বৌদি যদি মরে যায় ? १*$