পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামের মুমতি কেহ জবাব দেয় না দেখিয়া সে আরও অস্থির হইয়া উঠিল। চেঁচাইয়া বলিল, এই দিকটা আমার সীমানা । কোনদিন নেত্য কি, কেউ যদি আমার সীমানায় আসে, তখন পা ভেঙ্গে দেব । এই পা ভাঙ্গার ভয় সে ইতিপূৰ্ব্বে দেখাইয়াছিল, সেবারেও যেমন ফল হয় নাই, এবারেও হইল না । কেহ ভয় পাইয়াছে কিনা বোঝা গেল না । সন্ধ্যার পর আলো জালিয়া সে রান্নাঘরে ঢুকিয়! আবার চেচামেচি করিতে লাগিল, আমার কাঠ কই, আমি রাধব কি দিয়ে ? আমার শিল-নোড় কই, আমি বাটন বাটৰ কিসে? ও-ঘর হইতে নেত্য বলিল, মা বলচেন, কাল শিল-নোড়া কিনে দেবেন। না, আমি কেনা শিল-নোড়া চাইনে বলিয়া সে কাদিয়া ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল . থানিকক্ষণ পরে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, কেন অামার গণেশকে ধরলে ? কেন আমাকে খোন খোনা করে বুড়ী ভেঙালে, বেশ করেচি গাল দিয়েচি–ও মরে আর জন্মে পেত্নী হবে । দিগম্বরী চোখ কটুমটু করিয়া বলিলেন, শুনলি নারাণি, শুনলি ? এ-সমস্ত পায়ে পা তুলে দিয়ে ঝগড়া করা নয় ? নারায়ণী চুপ করিয়া অন্ত দিকে চাহিয়া ছিলেন, সেই দিকে চাহিয়া রহিলেন । & পরদিন সকল হইতেই রামের কথাবার্তা বদলাইয়া গেল। সম্পূর্ণ দুইটা দিন কাটিয়া গিয়াছে, বৌদিদি তাকে ডাকে নাই, বকে নাই, খাইতে দেয় নাই, এ-রকম তাহার জ্ঞানে দেখে নাই। আজ সে বাস্তবিক ভয় পাইয়াছিল। প্রথমটা রান্নাঘরের দাওয়ায় বসিয়া সে নানারূপ উল্টা-পাল্টা জবাবদিহি করিল। একবার বলিল, বেড়াল মারিতে পেয়ার ছুড়িয়াছিল ; একবার বলিল, হাত ফস্কাইয়া পড়িয়া গিয়া বৌদিদির কপালে লাগিয়াছিল ; একবার বলিল, কাচা পেয়ার ছুড়িয়া ফেলিয়া দিতেছিল। তার পর একবার বলিল, কাহাকেও সে গাল দেয় নাই ; একবার বলিল, গোবিন্দকে দিয়াছিল ; একবার বলিল, ভোলাকে দিয়াছিল। কিন্তু কোন কৈয়িতেই কাজ হইল না। ওঘরে কেহ জবাব দিল না, ই না একটা কথাও বলিল না। একবার বহু কষ্ট লঙ্গ-সঙ্কোচ ত্যাগ করিয়া আর কোনদিন করব না' \ăs?