পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ নারায়ণী কি একটা কঠিন আঘাত সহ করিয়া লইয়া সংক্ষেপে বলিলেন, আমার হুকুম নেওয়া হয়েচে । গিৰী বিশ্বাস করিলেন না। অধিকতর ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, আমি কচি খুকী নই নারাশি। হুকুম নিলি, আর আমি জানতেও পারলুম না। 斋 এবার নারায়ণীর আর সহ হইল না । তিনিও কঠিন হইয়া বলিলেন, তুমি কি জানবে মা, কার কাছে কখন আমি হুকুম পেয়েচি ? মা, যার মুখ আছে, সেই দিব্যি দিতে পারে, কিন্তু—বলিয়া তিনি গভীর স্নেহে রামের লজ্জিত মুখ জোর করিয়া বুকের ভিতর হইতে তুলিয়া ধরিয়া তাহার ললাটে চুম্বন করিয়া বলিলেন, কিন্তু যাকে বুকে করে এতটুকুকে বড় করে তুলতে হয়, সে-ই জানে, হুকুম কোথা দিয়ে কেমন করে আসে। তোমাকে ভাবতে হবে না মা ; এখন একটু সামনে থেকে যাও, দু’টো খাইয়ে দিই। ও আমার তিন দিন অনাহারে আছে । বলিতে বলিতে র্তাহার চোখের জল আবার ঝরিয়া পড়িতে লাগিল । দিগম্বরী একমুহূৰ্ত্ত স্থির থাকিয়া বলিলেন, এখানে তবে আর আমার কি করে থাকা হবে ? এ-বাড়িতে আর থাকতে পারব না, তা তোকে আজ স্পষ্ট বললুম। নারায়শী বলিলেন, আমিও এই কথাটাই তোমাকে মুখ ফুটে বলতে পারছিলুম না মা, সত্যি তোমার এখানে থাকা হবে না । তোমার চোখে চোখে আমার এত বড় ছেলে যেন আধখানা হয়ে গেছে। ও দুষ্ট হোক যা হোক, আমার বাড়িতে আমার চোখের সামনে ওকে শাস্তি দিতে আমি কাউকে দেব না। আজ তুমি থাক, কাল কিন্তু বাড়ি যেয়ো । তোমার খরচ-পত্র আমি সমস্ত পাঠিয়ে দেব, কিন্তু এখানে তোমার আর থাকা হবে না । দিগম্বী কাঠ হইয়া গিয়া কিছুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেলেন। রাম বুকের ভিতর হইতে আস্তে আস্তে বলিল, না বৌদি, উনি থাকুন, আমি ভাল হয়েচি, আমার স্বমতি হয়েচে—আর একটবার তুমি দেখ। নারায়ণী আর একবার তাহার মুখ ধরিয়া ললাটে ওষ্ঠাধর স্পর্শ করিয়া চোখের - জলের ভিতর দিয়া মৃদ্ধ হাসিয়া বলিলেন, তুই এখন ভাত খা । ७११