পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ । ফেলে, সুরমা তেমনি ছেলেমানুষটির মত মাথা হেলাইয়া গাঢ়স্বরে কহিল, তবে বলেছিলাম ত— যজ্ঞদত্ত নিজের ভাবনায় ব্যস্ত ছিল, তাই বুঝিতে পারিল না যে, এ কথার একেবারে কোন অর্থ-ই নাই ; কেন না, প্রথমত: 'পছন্দই হবে এমন কথা স্বরম কোনকালে উচ্চারণ করে নাই। দ্বিতীয়তঃ, সে নিজেও মেয়ে দেখে নাই বরং এমনটি সে মোটেই আশা করে না যে, এত অল্পে পছন্দ হইবে, এবং এত শীঘ্র সম্বন্ধ পাকা হইবে। তাই সে সমস্ত দিনটা নিজের ঘরে বসিয়া এই কথা তোলাপাড়া করিতে লাগিল। দু'দিন পরে কিন্তু যজ্ঞদত্ত অনেক কথা বুঝিতে পারিল, কহিল, মুরে, এ বিয়ে দিও না দিদি । সুরমা । বা: তা কি হয় ? সব ষে স্থির হয়ে গেছে। যজ্ঞ । স্থির কিছুই নয় ? স্বরম । না, তা হতে পারে না, দুঃখীর মেয়েকে মুখী করবে এটাও ভেবে দেখ, বিশেষ কথা দিয়ে ফেরাবে ? যজ্ঞদত্তের প্রতুলকুমারীর মুখ মনে পডিল, সহিষ্ণুতা ও শান্তভাবের নিগৃঢ় ছায়া যেন সেদিন তাহার কালো চোখ দুটিতে সে দেখিতে পাইয়াছিল—তাই সে চুপ করিয়া রছিল, তবু যজ্ঞদত্ত অনেক কথা ভাবিতে লাগিল। মুরমার কথাই বেশি ভাবিল। বর্ষার দিনে বাদল-পোকাগুলে। হঠাৎ যেমন ঘর ভরিয়া দেয় তেমন তাহার মনটা যেন অস্বপ্তিতে ভরিয়া উঠিল, কিন্তু তাহাদিগের নিভৃত বাসগহবরটা যেমন কিছুতেই খুজিয়া বাহির করা যায় না, তেমনি মুরমার মুখের কথাগুলো মনের কোন গুধ আকাঙ্খার ভিতর দিয়া দলে দলে বাহির হইতে লাগিল, সেইটাই খুজিয়া পাইল না। চোখে তার এমনি ঝাপস। জাল লাগিয়া রহিল যে, কোনক্রমেই স্বরমার মুখখানি মুস্পষ্ট দেখিতে পাইল না। & বিবাহ করিয়া যজ্ঞদত্ত বন্ধু ঘরে আনিল। বিকার গুপ্ত রোগী ঘরে লোক না থাকিলে যেমন সমস্ত শক্তি এক করিয়া জলের ঘড়াটার পানে ছুটিয়া গিয়া আঁকড়াইয়া ধরে, স্বরম তেমনি করিয়া নূতন বধূকে আলিঙ্গন করিল। নিজের যতগুলি গঙ্কনা ছিল পরাইয়া দিল, যতগুলি বস্ত্র ছিল সমস্ত তাহার বাক্সে ভরিয়া দিল। শুল্কমুখে সমস্ত দিন ধরিয়া বধূ সাঙ্গাইবার ধূম দেখিয়া যজ্ঞদত্ত মুখ চুন করিয়া ४३३