পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন্দির রাজনারায়ণবাৰু অনুমতি দিলেন, পূজা করবেন আপনি, তবে অপর্ণাকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখব । পিতার নিকট এ-কথা শুনিয়া অপর্ণ মাথা নাড়িয়া বলিল, তাও কি হয় ? বামুনের ছেলে, নিরাশ্রয়, কোথায় তাকে ৰিদায় করব ? যেমন জানে তেমনই পূজা করবে। ঠাকুর তাতেই সন্তুষ্ট হবেন । - কন্যার কথায় পিতার চৈতন্য হইল—এতটা আমি ভেবে দেখি নাই । মা, তোমার মন্দির, তোমার পূজা, তোমার যা ইচ্ছা তাই ক'রে, যাকে ইচ্ছা ভার দিয়ে। এই কথা বলিয়া পিতা প্রস্থান করিলেন । অপর্ণ শক্তিনাথকে ডাকিয়া আনিয়া পূজার ভার দিল। বকুনি খাইয় অবধি সে আর এদিকে আসে নাই, মধ্যে তাহার পিত্তার মৃত্যু হইয়াছে, সে নিজেও রুগ্ন। শুদ্ধমুখে তাহার শোক-দুঃখের চিহ্ন দেখিয়া অপর্ণার মায়া হইল, কহিল, তুমি পুজো ক'রে ; যা জান তাই ক’রো, তাতেই ঠাকুর তৃপ্ত হবেন । এমন স্নেহের স্বর শুনিয়া তাহার সাহস হইল, সাবধান হইয়া মন দিয়া পূজা করিতে বসিল। পূজা শেষ হইলে অপর্ণ নিজের হাতে সে যাহা খাইতে পারে বাধিয়া দিয়া বলিল, বেশ পূজা করেচ । বামুনঠাকুর, তুমি কি হাতে রোধে খাও ? কোনদিন রণধি, কোনদিন-যেদিন জর হয়, সেদিন আর রাধতে পারি না । তোমার কি কেউ নাই ? না ! শক্তিনাথ চলিয়া গেলে অপর্ণ তাহার উদ্দেশ্যে বলিল, আহা ! দেবতার কাছে যুক্ত করে তাহার হইয়া প্রার্থনা করিল, ঠাকুর, ইহার পুজায় তুমি সন্তুষ্ট হইয়ে, ছেলেমামুষের দোষ-অপরাধ লইও না । সেইদিন হইতে প্রতিদিন অপর্ণ দাসী দ্বারা সংবাদ লইত, সে কি খায়, কি করে, কি তাহার প্রয়োজন । নিরাশ্রয় ব্রাহ্মণকুমারটিকে সে তাহার অজ্ঞাতসারে আশ্রয় দিয়া তাহার সমস্ত ভার স্বেচ্ছায় মাথায় তুলিয়া লইল। এবং সেইদিন হইতে এই কিশোর ও কিশোরী, তাহদের ভক্তি স্নেহ ভূল-ভ্রাস্তি সব এক করিয়া এই মন্দিরটিকে আশ্রয়পূর্বক জীবনের বাকী কাজগুলিকে পর করিয়া দিল। শক্তিনাথ পূজা করে, অপর্ণ দেখাইয়া দেয়। শক্তিনাথ স্তব পাঠ করে, অপর্ণ মনে মনে তাহার অর্থ দেবতাকে বুঝাইয়। দেয়। শক্তিনাথ গন্ধ-পুষ্প হাত দিয়া তুলিয়া লয়, অপর্ণ অঙ্গুলী দিয়া দেখাইয়া বলে, বামুনঠাকুর, আজ এমনি করে সিংহাসন সাজাও দেখি, বেশ দেখাবে। এমনি করিয়া এই বৃহৎ মন্দিরের বৃহং কাজ চলিতে লাগিল । দেখিয়া শুনিয়া আচাৰ্য্য কছিলেন, ছেলে-খেলা হচ্ছে । বৃদ্ধ রাজনারায়ণ বলিলেন, যা করে ছোক মেয়েট নিজের অবস্থা ভূর্গে থাকলেই বঁাটি । ●ዐፄ