পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরং সাহিত্য-সংগ্ৰহ

অপর্ণ জিজ্ঞাসা করিল, ঠাকুর, তুমি দু'দিন হতে কিছু খাও নাই কেন ?

শক্তিনাথ শুল্কমুখে কহিল, আমার রাত্রে রোজ জয় হয় । জর হয় ? তবে স্বান করে পূজা করতে এস কেন ? এ-কথা বল নাই কেন ? শক্তিনাথের চোখে জল আসিল । মুহূৰ্বে সব কথা ভুলিয়া গিয়া সে চাদর খুলিয়া শিশি দুইটি বাহির করিয়া বলিল, তোমার জন্য এনেচি । আমার জন্য ? t. হুঁ, তুমি গন্ধ ভালবাস না ? উষ্ণ দুধ যেমন একটুখানি আগুনের তাপ পাইবামাত্র টগবগ করিয়া ফুটয় উঠে, অপর্ণার সর্বাঙ্গের রক্ত তেমনি করিয়া ফুটিয়া উঠিল—শিশি দুইটি দেখিয়াই সে চিনিয়াছিল ; গম্ভীর স্বরে বলিল, দাও। হাতে লইয়া অপর্ণ মন্দিরের বাহিরে যেখানে পূজা করা ফুল শুকাইয়া পড়িয়াছিল, সেইগানে শিশি দুইট নিক্ষেপ করিল। আতঙ্কে শক্তিনাথের বুকের রক্ত জমাট বাধিয়া গেল। কঠিন স্বরে অপর্ণ কহিঙ্গ, বামুনঠাকুর, তোমার মনে এত! আর তুমি আমার সামনে এসে না, মন্দিরের ছায়াও মাড়িয়ে না! অপর্ণা চম্পকাগুলি দিয়া বহির্দেশ দেখাইয়া বলিল, যাও— আজ তিন দিন হইল শক্তিনাথ গিয়াছে। আবার যদু আচাৰ্য্য পূজা করিতে বসিয়াছেন, আবার মানমুখে অপর্ণ চাহিয়া দেখিতেছে, এ যেন কাহার পূজা কে আসিয়া শেষ করিতেছে। পূজা সাঙ্গ করিয়া নৈবেদ্যের রাশি গামছায় বধিতে বাধিতে আচাৰ্য্যমশায় নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, ছেলেট বিনা চিকিৎসায় মারা গেল । আচাৰ্য্যের মুখপানে চাহিয়া অপর্ণ জিজ্ঞাসা করিল, কে মারা গেল ? # তুমি বুঝি শোন নাই ? কয়েকদিনের জরে শক্তিনাথ, ঐ মধু ভট্টাচার্ষ্যের ছেলে, আজ সকালে মারা পড়েচে । অপর্ণ তবুও তাছার মুখপানে চাহিয়া রহিল। আচাৰ্য্য দ্বারের বাহিরে আসিয়া বলিলেন, পাপের ফলে আজকাল মৃত্যু হচ্ছে—দেবতার সঙ্গে কি তামাসা চলে মা। আচাৰ্য্য চলিয়া গেলেন। অপর্ণ দ্বার রুদ্ধ করিয়া মাটিতে মাথা ঠুকিয়া কাদিতে লাগিল ; সহস্রবার কাদিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল ; ঠাকুর, এ কার পাপে ? বহুক্ষণ পরে সে উঠিয়া বসিল ; চোখ মুছিয়া সে সেই শুষ্ক ফুলের ভিতর হইতে গ্রেহের দান মাথায় করিয়া তুলিয়া লইল। মন্দিরের ভিতর আবার প্রবেশ করিয়া দেবতার পায়ের কাছে তাছা নামাইয়া দিয়া কাদিয়া কহিল, ঠাকুর, আমি যা নিতে পারি নাই -তা তুমি নাও। নিজের হাতে কখনও তোমার পূজা করি নাই, করচি–তুমি গ্রহণ কর, তৃপ্ত হও, আমার অন্য কামনা নাই।

  • *