পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দননগরে আলাপ-সভায় শরৎবাবু।–“সাহিত্যের গোড়ার কথা হ’ল 'সহিত' থেকে—অর্থাৎ সকলের সহিত সহায়ুভূতি দরকার। এইটাই মূল কথা। আমার কি-রকমে কি হ’ল তা জানি না । ছেলেবেলা থেকেই লেখাপড়ার একটা ঝোঁক ছিল। মনের ভিতর থেকে একটা বাসনা হ’ত—যা বাইরে পাঁচ রকম দেখছি শুনছি তার একটি রূপ দেওয়া যায় না ? হঠাৎ একদিন লিখতে শুরু করে দিলাম। প্রথমটায় অবগু এ'র ও’র চুরি করেই অধিকাংশ লিখতাম। অভিজ্ঞতা না থাকলে ভাল কিছুই লেখা যায় না। অভিজ্ঞতা লাভের জন্য অনেক কিছুই করতে হয় । অতি ভদ্র শ্রান্ত শিষ্ট জীবন হবে, আর সমস্ত অভিজ্ঞতা লাভ হবে—ত হয় না। বলেছি —ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক-- আমাকে চার-পাঁচবার সন্ন্যাসী হতে হয়েছিল । ভাল ভাল সন্ন্যাসীরা যা করেন সবই করেছি। গাজা মালপো কিছুই বাদ যায় নি।” [ শ্রোতৃমণ্ডলীর মধ্য হইতে একজন টিপ্পনী করিয়া বলিল—‘বিদ্যে খুব পেকেই তবে এসেছে—দেখছি!” শরংবাবু উপযুক্ত উত্তরই দিলেন—‘ওসব বিস্তে না পাকলে কিছুই হবার জো নেই মশাই ।” তারপর বলিতে লাগিলেন । “বিশ বছর এটাতে গেল। ঐ সময় খানকতক বই লিখে ফেললুম। দেবদাস’ প্রভৃতি ঐ আঠার-কুড়ির মধ্যে লেখা। তারপর গান-বাজনা শিখতে লাগলুম। পাচ বছর ঐতে গেল। তার পর পেটের দায়ে চলে গেলাম নানা দিকে। প্রচণ্ড সুড়ঙ্গত তাই থেকে। এমন অনেক কিছু করতে হত যাকে ঠিক ভাল বলা যায় না। তবে স্বকৃতি ছিল, ওর মধ্যে ডুবে পড়িনি। দেখতে থাকতাম, সমস্ত খুটিনাটি খুজে বেড়াতাম। অভিজ্ঞতা জমা হ’ত । সমস্ত Islandগুলা ( বর্শ্ব, জাভা, বোর্নিয়ো ) ঘুরে বেড়াতাম । সেখানকার লোক অধিকাংশ ভাল নয়—smugglers. এই সব অভিজ্ঞতার ফল--'পথের দাবী’ । বাড়িতে বসে আর্মচেয়ারে বসে সাহিত্য-স্থষ্টি হয় না, অমুকরন করা যেতে পারে। কিন্তু সত্যিকার মানুষ না দেখলে সাহিত্য হয় না। এরা করেন কি—বই থেকে একটা ‘ক্যারেক্টার’ নিয়ে তাকেই একটু অদল-বদল করে আর একটা ক্যারেক্টার স্বাক্ট করেন। মাছুয কি, তা মানুষ না দেখলে বোঝা যায় না। অতি কুৎসিত নোংরামির ভিতরও এত মচুন্যত্ব দেখছি যা কল্পনা করা যায় না। সে-সব অভিজ্ঞতা আমার মনের ভেতর থাকতে লাগল। আমার memoryটা বড় ভাল। ছেলেবেলা থেকে intact আছে, নষ্ট হয়নি। জানবার ইচ্ছা আমার বরাবর আছে। মাচুষের ভিতরকার সত্তাটা realise করাই আমার উদ্বেত। যার একটা খলন হ'ল, মানুষ তাকে একেবারে বাদ দেবে—এ কেমন কথা ?