পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রছ আশা করিয়াছিল কিন্তু বিপ্রদাসের মুখের পরে কোন চিহ্নই প্রকাশ পাইল না, তেমনই হাসিয়া বলিল, এ সকল গৃঢ় তথ্য অধিকারী ব্যতিরেকে প্রকাশ করা নিষেধ । দ্বিজুবাবু নিজে জানতে পাবেন ত? বিপ্রদাস ঘাড় নাড়িয়া কহিল, সময় হলেই পাবে। সে জানে রক্তমাংসে বাঘের পক্ষপাতিত্ব নেই। মূহুৰ্ত্তকালের জন্য বদনার মুখ ফ্যাকাশে হইয়া গেল। ইহার পরে সে ৰে কি প্রশ্ন করিবে ভাবিয়া পাইল না। এই পরিবর্তন বিপ্রদাসের তীক্ষ-দৃষ্টিকে এড়াইল না। পিতা ডাকিলেন, বুড়ী, আমাকে একটু জল দাও ত মা । বন্দনা উঠিয়া গিয়া পিতাকে কুজা হইতে জল দিয়া ফিরিয়া আসিয়া বসিল । পুনশ্চ দ্বিম্প্রদাসের কথা পাড়িতে তাহার ভয় করিল। অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করিম কহিল, মেজদির শাশুড়ীর জন্তে নয়, কিন্তু আমার না-খেয়ে আসায় মেজটি যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন ত আমিও দুঃখ পাব । আমি সেই কথাই এখন ভাবচি । বিপ্রদাস কহিল, মেজদি কষ্ট পাবেন সেইটে হ’লো বড়, আর আমার মা ষে লজ্জ্বল পাবেন, বেদনা বোধ করবেন সেটা হ’লো তুচ্ছ । তার মানে, মাহুষ আসল জিনিসটি না জানলে কত উল্টো চিন্তাই না করে ! বন্দনা কহিল, একে উন্টো চিন্তা বলচেন কেন ? বরঞ্চ এই ত স্বাভাবিক । বিপ্রদাস চুপ করিয়া রহিল। তাহার ক্ষুন্ন মুখের চেহারা বন্দনার চোখে পড়িল । বাহিরে অন্ধকার করিয়া আসিতেছিল, কিছুই দেখা যায় না, তথাপি জানালার বাহিরে চাহিয়া বন্দন বহুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। অন্যদিন এই সময়ে ট্রেন হাওড়ায় পৌঁছায়, কিন্তু আজ এখনো দু-তিন ঘণ্টা দেরি । সে মুখ ফিরাইয়া দেখিল বিপ্রদাস পকেট হইতে একটা ছোট খাতা বাহির করিয়া কি সব লিখিয়া যাইতেছে। জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা, মুখুয্যেমশাই, একটা কথার জবাব দেবেন ? কি কথা ? আপনি বলছিলেন আমাদের আত্ম-সমমবোধ শুধু ইস্কুল-কলেজের বইপড়া ধারণা । কিন্তু আপনার মা ত ইস্কুল-কলেজে পড়েননি, তার ধারণা কোথাকার শিক্ষা ? বিপ্রদাস বিস্মিত হইল, কিন্তু কিছু বলিল না। বদন কহিল, তার লম্বন্ধে কৌতুহল আমি মন থেকে সরাতে পরিচিনে । వీ