পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস পাঞ্জাবের ব্যারিস্টার সাহেব গাড়ির অত্যন্ত লেট হওয়ার প্রতি নিরতিশয় ক্রোধ প্রকাশ করিয়া বার বার জানাইতে লাগিলেন তাহাকে বি. এন. লাইনে যাইতে হইবে, অতএব ওয়েটিং রুম ব্যতীত আজ আর গত্যন্তর নাই । বিপ্রদাস নি:শব্দে দাড়াইয়া আছে, রায়সাহেব নিজেও একটুখানি যেন লজ্জিত হইয়াই কহিলেন, কিন্তু বিপ্রদাস, তুমিও-তুমি বোধ হয় আমাদের সঙ্গে— গ্র্যাগু হোটেলে ? বলিয়াই বিপ্রদাস হাসিয়া ফেলিল, কহিল, আমার জন্যে চিস্তা নেই। বৌবাজারে দ্বিজুর একটা বাড়ি আছে, প্রায়ই আসতে হয়, লোকজন সবই আছে —আচ্ছা, আজ সেইখানেই চলুন না ? বন্দনা পুলকিত হইয়া উঠিল—চলুন, সবাই সেইখানেই যাব। তাহার মাথার উপর হইতে যেন একটা বোঝা নামিয়া গেল। আনন্দের প্রাবল্যে অপর দুই সহযাত্রীকে সে-ই সাদরে আহবান করিয়া সবাই মিলিয়া মোটরে গিয়া উঠিল । సె বন্দনা সকালে উঠিয়া দেখিল এই বাড়িটার সম্বন্ধে সে যাহা ভাবিয়াছিল তাহা নয়। মনে করিয়াছিল পুরুষমানুষের বাসাবাড়ি, হয়ত ঘরের কোণে কোণে জয়াল, সিড়ির গায়ে খুখু, পানের পিচের দাগ, ভাঙা-চোরা আসবাব-পত্র, ময়লা বিছানা-কড়ি-বরগায় ঝুল, মাকড়সার জাল—এমনি সব আগোছাল বিশৃঙ্খল ব্যাপার। কাল রাত্রে সামান্ত আলোকে স্বল্পকালের মধ্যে দেখাও কিছু হয় নাই, কিন্তু আজ তাহার সুশৃঙ্খল পরিচ্ছন্নতায় সত্যই আশ্চৰ্য্য হইল। মস্ত বাড়ি, অনেক ঘর, অনেক বারান্দা, সমস্ত পরিষ্কার ঝকৃঝক্‌ করিতেছে। দ্বারের বাহিরে একজন মধ্যবয়সী বিধবা স্ত্রীলোক দাড়াইয়াছিল, দেখিতে ভদ্রঘরের মেয়ের মত, সে গলায় আঁচল দিয়া প্রণাম করিতেই বন্দনা সসঙ্কোচে চঞ্চল হইয়া উঠিল। সে বলিল, দিদি, আপনার জন্যেই দাড়িয়ে আছি, চলুন, স্বানের ঘরটা দেখিয়ে দিই। আমি এ বাড়ির দাসী । বন্দন জিজ্ঞাসা করিল, বাবা উঠেচেন ? না, কাল শুতে দেরি হয়েচে, হয়ত উঠতেও দেরি হবে। আমাদের সঙ্গে দুজন যারা এসেচেন তারা ? না, তারাও ওঠেননি। তোমাদের বড়বাৰু? তিনিও ঘুমুচ্চেন ? ❖ ግ