পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বিপ্রদাস কথাটা বুঝিল, হাসিয়া কহিল, চা আমি খাইনে, খাই শুধু ডাল-ভাত । তার সময় এ নয়—আমার জন্য চিস্তা নেই, তুমি বসে যাও । বনানা ইহার উত্তর দিল না, পিতা এবং অতিথি দুজনকে উদ্দেশ করিয়া কহিল, আমার অপরাধ হয়ে গেছে। বলে পাঠান উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি। খাবার ইচ্ছে আমার নেই, কিন্তু আপনারা আর অপেক্ষা করবেন না—আরম্ভ করে দিন। আমি বরঞ্চ আপনাদের চা তৈরি করে দিই। বলিয়া সে তৎক্ষণাৎ কাজে লাগিয়া গেল । সকলেই ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। চাকরটা একধারে দাড়াইয়াছিল, সে কুষ্ঠিত হইয়া উঠিল । পিতা উদ্বেগের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, অমুখ করেনি ত মা ? সন্ত্ৰীক ব্যারিস্টারসাহেব কি যে বলিবেন ভাবিয়া পাইলেন না। বন্দন! চা তৈরি করিতে করিতে কহিল, না বাবা, অমুখ করেনি, শুধু খেতে ইচ্ছে করচে ন} } তা হলে কাজ নেই। কাল বেশি রাত্রের খাওয়াটা বোধ করি তেমন হজম হয়নি। তা ছাড়া দিনের বেলা পিত্তি পড়ে গেল কি না । তাই বোধ হয় হবে। বেলা হলে মুখুয্যেমশায়ের সঙ্গে বসে ডাল-ভাত খাব, এ-বাড়িতে সে হয়ত হজম করতে পারব। কথাটায় আর কেহ তেমন খেয়াল করিল না, কিন্তু বিপ্রদাসের মুখের উপর দিয়া যেন একটা কাল ছায়া মুহূর্তের জন্য ভাসিয়া গেল। চাকরটা কি ভাবিয়া হঠাৎ বলিয়া ফেলিল, আজ একাদশী ; ও-বেলায় দুটো ফলমূল ছাড়া আর ত কিছু খান না। বন্দন| এইমাত্র এ-কথা শুনিয়া আসিয়াছিল, তথাপি বিস্ময়ের ভান করিয়া বলিল, শুধু ফল-মূল ? বেশ হাস্কা খাওয়া। সে-ই বোধ হয় খুব ভাল হবে। না, মুখুয্যেমশাই ? বিপ্রদাস হাসিয়া ঘাড় নাড়িল বটে, কিন্তু কেহ যে তাহাকে স্বচ্ছন্দে উপহাস করিতে পারে আজ এই প্রথম জানিয়া মনে মনে সে যেন স্তব্ধ হইয়া রহিল। এবং তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া বন্দনাও বোধ করি ইহা অনুভব করিল। কাজ-কৰ্ম্ম সারিয়া বন্দন পিতার সহিত যখন বাসায় ফিরিয়া আসিল তখন অপরাহ্ল বেলা । সস্ত্রীক ব্যারিস্টারসাহেব যাদুঘর, চিড়িয়াখানা, গড়ের মাঠের ভিক্টোরিয়া স্মৃতি-সৌধ প্রভৃতি কলিকাতার প্রধান দ্রষ্টব্য বস্তুসকল পরিদর্শন করিয়া তখনও ফিরে নাই । রাত্রের গাড়িতে র্তাহাদের যাইবার কথা, কিন্তু প্রোগ্রাম বদল করিয়া যাত্রাট আপাতত: তাহারা বাতিল করিয়াছেন। রায়সাহেব কাপড় ছাড়িতে র্তাহার ঘরে চলিয়া গেলেন, বন্দনার নিজের ঘরের সম্মুখে দেখা হইল অন্নদার সঙ্গে। সে হাসিমুখে অম্বুযোগের স্বরে বলিল, দিদি,