পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৫৪

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বন্দনার হাসিই পাইত, কিন্তু তন্ত্র-জড়িত চক্ষে এ-মূৰ্ত্তি আজ তাহাকে মুগ্ধ করিয়া দিল। এইভাবে কতক্ষণ সে যে দাড়াইয়াছিল তাহার দ্বস নাই, কিন্তু হঠাৎ যখন চৈতন্য হইল তখন পূবের আকাশ ফর্ণ হইয়া গিয়াছে, এবং ভূত্যের দল ঘুম ভাঙিয়া উঠিল বলিয়া। ভাগ্য ভাল যে, ইতিমধ্যে জাগিয়া উঠিয়া কেহ তাহার সম্মুখে আসিয়া পড়ে নাই। আর সে অপেক্ষা করিল না, ধীরে ধীরে উপরে’ উঠিয়া নিজের ঘরে গিয়া গুইয়া পড়িতেই গভীর নিদ্রামগ্ন হইতে তাহার মূহূৰ্ত্ত বিলম্ব হইল না । দ্বারে করাঘাত করিয়া অন্নদা ডাকিল, দিদি, বড় বেলা হয়ে গেল যে, উঠবেন না ? বন্দন ব্যস্ত হইয়া দ্বার খুলিয়া বাইরে আসিয়া দাড়াইল, বাস্তবিকই বেল হইয়াছে, লজ্জিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, এরা বোধ হয় আজও অপেক্ষা করে আছেন ? একটু সকালে আমাকে তুলে দিলে না কেন ? স্বান করে তৈরি হয়ে নিতে ত একঘণ্টার আগে পেরে উঠব না অন্নদা । তাহার বিপন্ন মুখের পানে চাহিয়া অন্নদা হাসিয়া বলিল, ভয় নেই দিদি, আজ আর ওঁরা সবুর করতে পারেন নি—শেষ করে নিয়েছেন—এখন যতক্ষণ খুশি স্বান করুন গে, কেউ পেছু ডাকবে না। শুনিয়া বন্দন যেন বাচিয়া গেল। সেও হাসিমুখে কহিল, তোমাদের অনেক জিনিসই পছন্দ করিনে সত্যি, কিন্তু এটা করি। সকলের দল বেঁধে ঘড়ির কাটা মিলিয়ে যে গেলবার পালা নেই এ মস্ত স্বস্তি । অন্নদা বলিল, কিন্তু সকালে কি আপনার ক্ষিদে পায় না দিদি ? বন্দনা কহিল, একদিনও না । অথচ ছেলেবেলা থেকে নিত্যই খেয়ে আসচি । আচ্ছা যাই, আর দেরি করব না, বলিয়া সে চলিয়া গেল । ঘণ্টা-দুই পরে নীচে বিপ্রদাসের সহিত তাহার দেখা হইল। সে কাছারি-ম্বর হইতে কাজ সারিয়া বাহির হইতেছিল । বন্দন! নমস্কার করিল। চা খাওয়া হ’লে ? ওঁরা অপেক্ষা করতে পারলেন না, কিন্তু তোমারই— বন্দনা থামাইয়া দিয়া কহিল, সেজন্যে ত অনুযোগ করিনি মুখুয্যেমশাই। বিপ্রদাস হাসিয়া বলিল, মেজাজের বাহাদুরী আছে তা অস্বীকার করব না, কিন্তু ছুবোনের মধ্যে প্রভেদটি যেন চন্দ্র-সূর্য্যের মত । শুনলাম নাকি শীঘ্রই যাচ্ছ বিলেতে শিক্ষাটা পাকা করে নিতে। যাও, ফিরে এসে একটা খবর দিয়ে, গিয়ে একবার মুক্তিটা দেখে আসব। §§