পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস দয়ামী বলিলেন, কি হয়েচে ? আজ মস্ত একটা লালমুখে এসে আমাদের গাড়ি আটকালে। ভাগ্যে মেয়েটা সঙ্গে ছিল, ইংরজিতে কি দুকথা বুঝিয়ে বললে, সাহেব তক্ষনি গাড়ি ছেড়ে দিলে। নইলে কি হ’ত বল ত ? হয়ত সহজে ছাড়ত না, নয়ত থানায় পৰ্য্যন্ত টেনে নিয়ে যেত—কি বিভ্রাটই ঘটত ! তোর নতুন পাঞ্জাবী ড্রাইভারটা যেন জন্তু । বিপ্রদাস হাসিয়া কহিল, কি করেছিলে তোমরা—ধাক্কা লাগিয়েছিলে ? বন্দন আসিয়া দাড়াইল । দয়াময়ী ঘাড় নাড়িয়া সায় দিয়া উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে কহিলেন, তোমার কথা বিপিনকে তাই বলছিলুম মা, লেখা-পড়া-জানা মেয়েদের ধরণই আলাদা ! তুমি সঙ্গে না থাকলে সবাই আজ কি বিপদেই পড়তুম। কিন্তু সমস্ত দোষ সেই মেম বেটির । চালাতে জানে না তৰু চালাবে। জানে না—তবু বাহাদুরি করবে। বিপ্রদাস সহাস্থে কহিল, লেখা-পড়া-জানা মেয়েদের ধরনই ঐ রকম মা । মেমসাহেব নিশ্চয়ই লেখা-পড়া জানে । মা ও বন্দনা দুজনেই হাসিলেন । বন্দনা কহিল, মুখুয্যেমশাই, সেটা মেমসাহেবের দোষ, লেখা-পড়ার নয়। মা, আমি রান্নাঘরটা একবার ঘুরে আসি গে। কাল দ্বিজুবাবুর আবার রুটি ঠাকুর শক্ত করে ফেলেছিল, তার খাবার স্থবিধে হয়নি! বলিয়া সে চলিয়া গেল । দয়াময়ী স্নেহের চক্ষে সেই দিকে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, সকল দিক দৃষ্ট আছে। কেবল লেখা-পড়াই নয় বিপিন, মেয়েটা জানে না এমন কাজ নেই। আর তেমনি মিষ্টি কথা। ভার দিয়ে নিশ্চিস্তি—সংসারের কিছুটি চেয়ে দেখতে হয় না । বিপ্রদাস কহিল, স্লেচ্ছ বলে ঘেন্না কর না ত মা ? দয়াময়ী বলিলেন, তোর এক কথা ! ম্লেচ্ছ হতে যাবে কিসের জন্যে—ওর মা একবার বিলেত গিয়েছিল বলেই লোকে মেমসাহেব বলে দুর্ণাম রটালে। নইলে আমার মতই বাঙালী ঘরের মেয়ে। বন্দন জুতো পরে—তা পরলেই বা । বিদেশে অমন সবাই পরে। লোকজনের সামনে বার হয়—তাতেই বা দোষ কি। বোম্বায়ে ত আর ঘোমটা দেওয়া নেই—ছেলে-বেলা থেকে যা শিখচে তাই করে। আমার যেমন বৌমা তেমনি ও ! বাপের সঙ্গে চলে যাবে বলচে—শুনলে মন কেমন করে বাবা । বিপ্রদাস কহিল, মন কেমন করলে চলবে কেন মা ? বন্দন থাকতে আসেনি— ছুদিন পরে ওকে যেতে ত হবেই। দয়াময়ী কহিলেন, যাবে সত্যি, কিন্তু ছেড়ে দিতে মন চায় না—ইচ্ছে করে চিরকাল ধরে রেখে দিই। 象歌