পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বিপ্রদাস কহিল, তোমাকে সত্যি করে বলচি আমি কিছুই করিনি। কিন্তু মানুষের মধ্যে কত রকমের মতলব আনাগোনা করে তার কি কোন সঠিক নির্দেশ দেওয়া চলে মা ? দয়াময়ী পূর্বের মত মাথা নাড়িয়া বলিলেন, না, তাও না। নইলে তোকে দেখলেই কেন আজকাল আমার এমন মন-কেমন করে ? তোকে মানুষ করেচি, আমি বেঁচে থাকতেই শেষকালে এতবড় নেমকহারামি করবি বাবা ? বলিতে বলিতে র্তাহার দুই চোখ জলে পরিপূর্ণ হইয় গেল । বিপ্রদাস বিপন্ন হইয়া বলিল, অমঙ্গল কল্পনা করে যদি তুমি মিথ্যে ভয় পাও মা, আমি তার কি প্রতিকার করতে পারি বল ? তুমি ত জান তোমার অমতে কখন একটা কাজও আমি করিনে । দয়াময়ী বলিলেন, কর না সত্যি, কিন্তু কাল দ্বিজুকে ডেকে পাঠিয়ে কেন বলেচ কাজ-কৰ্ম্ম সমস্ত বুঝে নিতে ? বড় হল, আমাকে সাহায্য করবে না ? দয়াময়ী রাগ কুরিয়া বলিলেন, ওর কতটুকু শক্তি? আমাকে ভোলানে বিপিন, তুই আজ এত ক্লান্ত যে তোর প্রয়োজন হল ওর সাহায্য নেবার ? কি তোর মনে আছে আমাকে খুলে বল ? বিপ্রদাস চুপ করিয়া রহিল, একথা বলিল না যে, তিনি নিজেই এইমাত্র দ্বিজদাসের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে চিস্তা করিতে তাহাকে বলিতেছেন । কিন্তু ইহারই আভাস পাওয়া গেল দয়াময়ীর পরবর্তী কথায় । বলিতে লাগিলেন, আমাদের এ পুণ্যের সংসার, ধৰ্ম্মের পরিবার, এখানে অনাচার সয় না। আমাদের বাড়ি নিয়মের কড়াকড়িতে বাধা । তোর বিয়ে দিয়েছিলুম আমি সতেরো বছর বয়সে–সে তোর মত নিয়ে নয়— আমাদের সাধ হয়েছিল বলে, কিন্তু দ্বিজু বলে সে বিয়ে করবে না। ও এম. এ, পাশ করেচে, ওর ভাল-মন্দ বোঝবার শক্তি হয়েচে, ওর ওপর কারও জোর খাটবে না। সে যদি সংসারী না হয় তাকে আমার বিশ্বাস নেই, আমার শ্বশুরের বিষয়-সম্পত্তিতে সে যেন হাত দিতে না আসে । বিপ্রদাস জিজ্ঞাসা করিল, দ্বিজু কবে বললে সে বিয়ে করবে না ? প্রায়ই ত বলে, বিয়ে করবার লোক অনেক আছে তার করুক। ও করবে শুধু দেশের কাজ। তোরা ভাবিস এখানে এসে পৰ্যন্ত আমি দিনরাত ঘুরে বেড়াই— খুব মনের স্বখে আছি। কিন্তু স্বখে নেই! এর ওপর তুই দিলি আজ জেলের দৃষ্টান্ত— যেন আমাকে বোঝাবার আর কোন দৃষ্টান্তই তোর হাতে ছিল না। একদিন কিন্তু টের পাবি বিপিন । বিপ্রদাস কহিল, ওর বৌদিদিকে হুকুম করতে বল না মা ? stes