পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস তার কথাও সে শুনবে না । শুনবে মা, শুনবে । সময় হলেই শুনবে। একটু হাসিয়া কহিল, আর যদি আমাকে আদেশ কর ত তার পাত্রীর সন্ধান করতে পারি । বন্দন আসিয়া ঘরে ঢুকিল, অমৃযোগের স্বরে কহিল, কৈ এলেন না ত ? আমি কতক্ষণ-ধরে বসে আছি মা ! চল মা, যাচ্ছি। বিপ্রদাস কহিল, আমাদের অক্ষয়বাবুর সেই মেয়েটিকে তোমার মনে আছে মা ? এখন সে বড় হয়েচে । মেয়েটি যেমন রূপে তেমনি গুণে । আমাদের স্ব-ঘর, বল ত গিয়ে দেখে আসি, কথাবার্তা বলি। আমার বিশ্বাস দ্বিজুর অপছন্দ হবে না। না না, সে এখন থাক, বলিয়া দয়াময়ী পলকের জন্য একবার বন্দনার মুখের পানে চাহিয়া দেখিলেন, বলিলেন, সতীর ইচ্ছে—না—না বিপিন, বোমাকে জিজ্ঞেস না করে সেসব কিছু করে কাজ নেই । বন্দনা কথা কহিল। সুন্দর শাস্ত চোখে উভয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, তাতে দোষ কি মা ? এই ত কলকাতায়, চলুন না, দিদিকে নিয়ে আমরা গিয়ে দেখে আসি গে । শুনিয়া দয়াময়ী বিব্রত হইয়া পড়িলেন, কি ষে জবাব দিবেন ভাবিয়া পাইলেন না । বিপ্রদাস কহিল, এ উত্তম প্রস্তাব মা। অক্ষয়বাবু স্বধৰ্ম্মনিষ্ঠ পণ্ডিত ব্রাহ্মণ, সংস্কৃতের অধ্যাপক । মেয়েকে ইস্কুল-কলেজ থেকে পাশ করাননি বটে, কিন্তু যত্ন করে শিখিয়েচেন অনেক। একদিন তাদের ওখানে আমার নিমন্ত্রণ ছিল, সেদিন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছিলুম আমি অনেক কথা । মনে হয়েছিল, বাপ সাধ করে মেয়ের নামটি যে রেখেছিলেন মৈত্রেয়ী তা অসার্থক হয়নি। যাও না মা, গিয়ে একবার তাকে দেখে আসবে—তোমার বড়বে অন্ততঃ মনে মনে স্বীকার করবেন তিনি ছাড়াও সংসারে রূপসী মেয়ে আছে । মা হাসিতে চাহিলেন, কিন্তু হাসি আসিল না, মুখে কথাও যোগাইল না—বন্দন৷ পুনশ্চ অনুরোধ করিল, চলুন না মা, আমরা গিয়ে একবার মৈত্রেীকে দেখে আসি গে? বেশি দূর ত নয়। দয়াময়ী চাহিয়া দেখিলেন বদনার মুখের পরে এখন সে লাবণ্য আর নাই, যেন ছায়ায় ঢাকা দিয়াছে। এইবার এতক্ষণে তিনি জবাব খুজিয়া পাইলেন, কহিলেন, ন মা, দূর বেশি নয় জানি, কিন্তু সে সময় আমার নেই। চল আমরা যাই,— এ বেলায় কি রান্না হবে দেখি গে। বলিয়া তিনি তাহার হাত ধরিয়া ঘর হইতে বাহিরে গেলেন ।

  • }