পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ স্বধীরের প্রণাম করার অভ্যাস নাই, ও পোষাকে করাও কঠিন, সে কাছে আসিয়া মাথা নোয়াইয়া কোনমতে আদেশ পালন করিল। এই ছেলেটির সহিত দয়াময়ীর সস্তান-সম্বন্ধ যে কি সূত্রে হইল তাহা বুঝাইবার জন্ত রায়সাহেব বলিতে লাগিলেন, ওর বাপ আর আমি একসঙ্গে বিলাতে পড়েছিলুম বেয়ান, তখন থেকেই আমরা পরম বন্ধু । স্বধীর নিজেও বিলাতে অনেকগুলো পাশ করে মাত্রাজের শিক্ষাবিভাগের ভাল চাকরি পেয়েচে । কথা আছে ওদের বিয়ের পরে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ও বন্দনাকে সঙ্গে নিয়ে আবার বিলেতে বেড়াতে যাবে, সেখানে ইচ্ছে হয় বন্দনা কলেজে ভৰ্ত্তি হবে, না হয় দেশ দেখেই দুজনে ফিরে আসবে। দ্যাখো মুধীর, তোমরা যদি এই আগস্ট সেপ্টেম্বরেই যাওয়া স্থির করতে পার আমিও না হয় মাস-তিনেকের ছুটি নিয়ে একবার ঘুরে আসি। কি বলিসরে বুড়ি, ভাল হয় না ? বন্দন সেখান হইতেই আস্তে আস্তে বলিল, কেন হবে না বাবা, তুমি সঙ্গে থাকলে ত ভালই হয় । রায়সাহেব উৎসাহ-ভরে কহিলেন, তাতে আরও একটা স্ববিধে এই হবে যে, তোদের বিয়ের পরেও মাস-খনেক সময় পাওয়া যাৰে, কোনরকম তাড়া-হুড়ো করতে হবে না। বুঝলে না স্বধীর স্থবিধেটা ? ইহাতে সুধীর ও বন্দন। উভয়েই মাথা নাড়িয়া সায় দিল। দয়াময়ী এতক্ষণে বুঝিলেন এই ছেলেটি রায়সাহেবের ভাবী জামাতা। অতএব তাহারও পুত্র-স্থানীয়। বুকের ভিতরটায় হঠাৎ একবার তোলপাড় করিয়া উঠিল, কিন্তু তিনি বিপ্রদাসের মা, বলরামপুরের বহুখ্যাত মুখুয্যে পরিবারের কত্রী, মুহূর্তে নিজেকে সংবরণ করিয়া লইয়া ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, সুধীর, তোমাদের বাড়ি কোথায় বাবা ? মুধীর কহিল, এখন বোম্বায়ে। কিন্তু বাবার মুখে শুনেচি আগে ছিল দুর্গাপুরে, কিন্তু বর্তমানে সেখানে বোধ করি আমাদের আর কিছু নেই। কোন দুর্গাপুর স্বধীর ? বৰ্দ্ধমান জেলার ? : স্বধীর বলিল, ই, বাবার মুখে তাই শুনেচি। কালনার কাছে কোন একটি ছোট্ট গ্রাম, এখন নাকি সে দেশ ম্যালেরিয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে। দয়াময়ী ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া প্রশ্ন করিলেন, তোমার বাবার নামটি কি ? হুধীর বলিল, আমার বাবার নাম ঐরামচন্দ্র বস্থ । দয়াময়ী চমকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার পিতামহর নাম কি ছিল হরিহর বন্ধ ? প্রশ্ন শুনিয়া রায়সাহেব পৰ্য্যস্ত বিস্ময়াপন্ন হইলেন, বলিলেন, আপনি কি ওদের জানেন নাকি ? স্থ, জানি। দুর্গাপুরে আমার মামার বাড়ি । ছেলে-বেলায় দিদিমার কাছে ७६