পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস মানুষ হয়েচি বলে ও-গ্রামের প্রায় সকলকেই চিনি। ওঁদের বাড়ি ছিল আমাদের পাড়ায়। কিন্তু এখন আর কথা কইবার সময় নেই স্বধীর, আমার অাহিকের দেরি হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু কিছু না খেয়েই যেন তুমি চলে যেও না-আমি এখনি সমস্ত ঠিক করে দিতে বলচি । স্বধীর সহস্যে কহিল, তার আর বাকী নেই, বিপ্রদাসবাবু আগেই সে কাজ সমাধা করে দিয়েছেন । দিয়েচে ? আচ্ছা তা হলে এখন আমি আসি, বলিয়া দয়াময়ী বাহির হইয়া গেলেন। বদনার প্রতি একবার চাহিলেন না, একটা কথাও বলিলেন না। পরদিন সকালে স্নান-আহ্নিক সারিয়া বিপ্রদাসপ্রতিদিনের অভ্যাসমত মায়ের পদধূলির জন্য আজও তাহার ঘরে প্রবেশ করিয়া ভয়ানক আশ্চৰ্য্য হইয়া দেখিল তাহার জিনিস-পত্র বাধা-ছাঁদ হইতেছে । এ কি মা, কোথাও যাবে নাকি ? দয়াময়ী বলিলেন, তোকে খুজে পেলুম না, তাই দত্তমশাইকে জিজ্ঞেস করে জানলুম সাড়ে নটার গাড়িতে বার হতে পারলে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি পৌছতে পারব। কিন্তু পরশু তোর মকদ্দমার দিন, তুই ত সঙ্গে যেতে পারবিনে, দ্বিজুকে বলে দে, ও আমাদেব পৌছে দিয়ে আমুক । বিপ্রদাস চাহিয়া দেখিল মায়ের দুই চোখ রাঙা, মুখ শুষ্ক, দেখিলে মনে হয় সারারাত্রি তাহার উপর দিয়া একটা ঝড় বহিয়া গিয়াছে। বিপ্রদাস সভয়ে প্রশ্ন করিল, হঠাৎ কি কোন দরকার পড়েছে মা ? মা বলিলেন, দুদিনের জন্যে এসে আট-দশদিন কেটে গেল, ওদিকে ঠাকুর-সেবার কি হচ্চে জানিনে, পাঁচ-ছয়টি গরুর প্রসব হবার সময় হয়েচে দেখে এসেচি, তাদের কি হল খবর পাইনি, বাক্ষর পাঠশালা কামাই হচ্ছে—আর ত দেরি করা চলে না বিপিন । এ সকল ব্যাপার দয়াময়ীর কাছে তুচ্ছ নয় সত্য, কিন্তু আসল কারণটা তিনি প্রকাশ করিলেন না, বিপ্রদাস তাহা বুঝিয়াই বলিল, তবু কি আজ না গেলে নয় মা ? না বাবা, তুই আমাকে বাধা দিসনে। দ্বিজুকে সঙ্গে যেতে বলে দে, না হয় আর কেউ আমাদের পৌছে দিয়ে আমুক । তাই হবে মা, বলিয়া বিপ্রদাস পায়ের ধূলা মাথায় লইয়াবাহির হইয়া গেল। নিজের শোবার ঘরে আসিয়া দেখিল সতী অত্যস্ত ব্যস্ত এবং কাছে বসিয়া অন্নদা সন্দেশের হাড়ি, ফল-মূল ও ছেলের দুধের ঘটি গুছাইয়া ঝুড়িতে তুলিতেছে। সতী মাথায় আঁচল টানিয়া দিয়া উঠিয়া দাড়াইল । বিপ্রদাস বলিল, অন্নদাদিদি, ব্যাপার কি জান ? ept હર્મ-ન્ય