পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস সতী পিছনে ছিল, সে কাছে আসিয়া বোনের হাত ধরিয়াই কঁদিয়া ফেলিল— আমরা চললুম ভাই-আর কিছু তাহার মুখ দিয়া বাহির হইল না, চোখ মুছিতে মুছিতে গাড়িতে তাহার শাশুড়ীর পাশে গিয়া বসিল । বদন স্তব্ধ-বিস্ময়ে নিৰ্ব্বাক্ দাড়াইয়া–যেন পাথরের মূৰ্ত্তি, অকস্মাং একি হইল! বাস্থ আসিয়া যখন তাহার পায়ের কাছে প্রণাম করিয়া বলিল, আমি যাচ্ছি মালীম, তখনই তাহার চৈতন্য হইল, তাহারও এখনো কাহাকেও প্রণাম করা হয় নাই। তাড়াতাড়ি বাক্ষর কপালে একটা চুমা দিয়া সে গাড়ির দরজার কাছে আসিয়া হাত বাড়াইয়া দয়াময়ী ও মেজদির পায়ের ধূলা লইল । সতী নীরবে তাহার চিবুক ম্পর্শ করিল, মা অস্ফুটে আশীৰ্ব্বাদ করিলেন, কিন্তু কি বলিলেন, বুঝা গেল না। মোটর ছাড়িয়া দিল । অন্নদা কহিল, চল দিদি, আমরা ওপরে যাই । তাহার স্নেহের কণ্ঠস্বরে বন্দনা লজ্জা পাইল, ক্ষণকালের বিহবলতা সজোরে ঝাড়িয়া ফেলিয়া বলিল, তুমি যাও অন্নদা, আমি রান্নাঘরের কাজগুলো সেরে নিয়ে যাচ্ছি। এই বলিয়া সেই দিকে চলিয়া গেল । কাল বিকালেও কথা হইয়াছিল রায়সাহেব বোম্বাই রওনা হইলে সকলে একত্রে বলরামপুর যাত্রা করিবেন। কিন্তু তাহার উল্লেখ পৰ্য্যন্ত নয়, মৃদুর ভবিষ্যতে কোন একদিনের মৌখিক আহবান পৰ্য্যন্ত নয়। ঘণ্ট-খানেক পরে নিজের হাতে চায়ের সরঞ্জাম লইয়া বন্দন পিতার ঘরে গেলে তিনি অত্যন্ত আক্ষেপ-সহকারে বলিয়া উঠিলেন, বেহানরা চলে গেলেন, সকালে উঠতে পারিনি মা, ছি ছি, কি ন-জানি আমাকে তারা মনে করে গেলেন । বন্দনা বলিল, বাবা, আমরা কবে বোম্বায়ে যাব ? বাবা বলিলেন, তোমার যে বলরামপুরে যাবার কথা ছিল মা, গেলে না কেন ? মেয়ে বলিল, তোমাকে একলা ফেলে রেখে কি করে যাব বাবা, তুমি যে আজও ভাল হতে পারনি । ভাল ত হয়েচিম । বেহানকে কথা দেওয়া হয়েচে তুমি যাবে, না হয় যাবার পথে আমি তোমাকে বলরামপুরে নামিয়ে দিয়ে যাব। কি বল মা ? না বাবা, সে হবে না। তোমাকে এতটা পথ একলা যেতে আমি দিতে পারব না । কন্যার কথা শুনিয়া পিতা পুলকিত-চিত্তে তিরস্কার করিয়া বলিলেন, দূর বুড়ী ! দেখা হলে বেয়ান তোকে ঠাট্টা করে বলবে, বুড়ো বাপটাকে মেয়েট চোখের আড়াল করতে পারে না | ছি ছি তুমি খাও বাবা, আমি আসচি, বলিয়া বন্দন বাহির হইয়া গেল। u,