পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস আপনি জানেন না ? দ্বিজদাস কহিল, একেবারেই জানিনে বললে মিথ্যা বলা হবে। কাস্ত্রণ বোঁদি কিঞ্চিৎ অনুমান করেচেন এবং আমি তার যৎসামান্য একটু অংশ লাত করেচি । বন্দন বলিল, সেই যৎসামান্ত অংশটুকুই আমাকে আপনার বলতে হবে। দ্বিজদাস এক মুহূর্ত মৌন থাকিয়া কহিল, তবেই বিপদে ফেললে বন্দন। একথা কি তোমার না শুনলেই চলে না ? না, সে হবে না, আপনাকে বলতেই হবে। না-ই বা শুনলে ! বন্দন বলিল, দেখুন দ্বিজবাবু, আমাদের সর্ত হয়েছিল, এ-বাড়িতে আপনার সমস্ত কথা আমি শুনব এবং আপনিও আমার সমস্ত কথা শুনবেন । আপনি জানেন আপনার একটি আদেশও আমিও লঙ্ঘন করিনি। বলিতে গিয়া তাহার চোখে জল আসিতেছিল আর একদিকে চাহিয়া তাহা কোনমতে সামলাইয়া লইল । দ্বিজদাস ব্যথিত হইয়া বলিল, নিতান্ত অর্থহীন ব্যাপার তাই বলার আমার ইচ্ছে ছিল না। মা তোমার পরেই রাগ করে চলে গেছেন বটে, কিন্তু তোমার কিছুমাত্র অপরাধ নেই। সমস্ত দোষ মার নিজের। বৌদিদিরও কিঞ্চিৎ আছে, কারণ প্রত্যক্ষে না হলেও পরোক্ষে চক্রাস্তে যোগ দিয়েছিলেন বলেই আমার সন্দেহ । কিন্তু সবচেয়ে নিরপরাধ বেচার দ্বিজদাস নিজে । বন্দন অধীর হইয়া উঠিল—বলুন না শীগগির চক্রান্তটা কিসের ? দ্বিজদাস বলিল, চক্রান্ত শব্দটা বোধ হয় সঙ্গত নয় ! কিন্তু মা করেছিলেন মনে মনে স্বর্ণলঙ্কা-ভাগ। কিন্তু হিসেবের ভুলে ভাগ্যে পড়ল যখন শূন্য তখন সমস্ত সংসারের উপর গেলেন চটে। চটাও ঠিক নয়, অনেকটা আশাভঙ্গের ক্ষুব্ধ অভিমান । বন্দনা নীরবে চাহিয়া রহিল, দ্বিজদাস বলিতে লাগিল, জানো নিশ্চয়ই যে একদিন তোমার প্রতি ছিল তার যত বড় বিতৃষ্ণা আর একদিন জন্মালো তার তেমনি গভীর স্নেহ। রূপে, গুণে, বিষ্ঠায়, বুদ্ধিতে, কাজে-কৰ্ম্মে, দয়া-মায়ায় এক বৌদি ছাড়া মার কাছে কেউ তোমার আর জোড়া রইলো না । তোমাকে ম্লেচ্ছ বলে সাধ্য কার? তখনি মা কোমর বেঁধে প্রমাণ করতে বসতেন এতবড় নিষ্ঠাবতী ব্রাহ্মণ-তনয়া সমস্ত ভারতবর্ষ হাতড়ালে খুজে মিলবে না। এই বলিয়া দ্বিজদাস নিজের রসিকতার আনন্দে অট্টহাস্ত করিয়া উঠিল। এ হাসি বন্দনার অত্যন্ত খারাপ লাগিলেও সে নিজেও হাসিয়া ফেলিল । দ্বিজদাস বলিল, হাসচ কি বন্দন, আসলে সেই ত হয়েচে সকলের বিপদ । $)