পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হাত তুলে ইঙ্গিতে আমাকে বিদায় দিলেন, মাত্র একটি বেলার পরিচয়, তবু কি অর্থ তার আমার কাছে এতটুকু অস্পষ্ট ছিল ভাবেন ? দ্বিজদাস চুপ করিয়া চাহিয়া আছে দেখিয়া বন্দন বলিল, গেল সন্দেহ ? দ্বিজদাস বলিল, বোধ হয় আর একটু তাড়া দিলেই যাবে। কিন্তু ভাবছি, আমার সংশয়-নিরসনের এই পদ্ধতিই কি চিরকাল চালাবে ? বন্দন বলিল, চিরকালের ব্যবস্থা আগে ত আমুক। কিন্তু সমস্ত জেনেও যে তাচ্ছিল্যের অভিনয় করে তাকে বোঝাবার আর কোন পথ েই ৷ কিন্তু সে আমি নয়, মা ! বোঝাবে কি করে ? বন্দন বলিল, মা আপনি বুঝবেন। আমাকে তিনি মেয়ের মতো ভালবাসেন । আজ হঠাৎ যত চঞ্চল হয়েই যান, যা জেনে গেচেন সে যে সত্যি নয় এ-কথা মাকেই যদি না বোঝাতে পারি আমি কিসের আশা করি বলুন ত! আমার কোন ভাবনা নেই দ্বিজুবাবু, একদিন-না-একদিন সমস্ত কথা তাকে আমি বোঝাবই বোঝাব। বলিতে গিয়া শেষের দিকে হঠাৎ তাহার গলা ভাঙ্গিয়া দুই চোখ জলে পরিপূর্ণ হইয়া গেল । সত্য ও মিথ্যার দ্বিধা দ্বিজদাসের ঘুচিয়াও ঘুচিতেছিল না, কিন্তু এই চোখের জল । ও কণ্ঠস্বরের নিগৃঢ় পরিবর্তনে তাহার সকল সংশয় ঘুচিল—এ ত শুধু পরিহাস নয়। বিস্ময় ও ব্যথায় আলোড়িত হইয়া সে বলিয়া উঠিল, এ কি বন্দনা, তুমি কাদচ যে ? প্রত্যুত্তরে বন্দন কথা কহিল না, কেবল অশ্র মুছিয়া আর একদিকে চাহিয়া রহিল । দ্বিজদাস নিজেও বহুক্ষণ নীরব থাকিয়া ধীরে ধীরে বলিল, সুধীর ত তোমার কাছে কোন দোষ করেনি, বন্দন । বন্দন মুখ ফিরিয়া চাহিল না, শুধু বলিল, দোষের বিচার কিসের জন্যে বলুন ত ? আমি কি তার অপরাধের প্রতিশোধ নিতে বসেচি ? দ্বিজদাস একথার জবাব খুজিয়া পাইল না, বুঝিল প্রশ্নটা একেবারে নিরর্থক হইয়াছে। আবার কিছুক্ষণ নি:শব্দে থাকিয়া বলিল, কিন্তু মুধীর তোমাদের আপন সমাজের-—অথচ শিক্ষায়, সংস্কারে, অভ্যাসে, আচরণে মুখুয্যেদের সঙ্গে তোমার কোথাও মিল হবে না। তবে কিসের জন্য এদের কারাগারে এসে চিরকালের জন্য তুমি ঢুকতে যাবে বন্দনা ? আমার জন্যে ? আজ হয়ত তুমি বুঝবে না, কিন্তু একদিন যদি এ ভুল ধরা পড়ে তখন পরিতাপের অবধি থাকবে না। আমাকে তুমি কিভাবে বুঝেচ জানিনে, কিন্তু বৌদি, মা, দাদা, আমাদের ঠাকুর, আমাদের অতিথিশালা, আমাদের আত্মীয়-স্বজন, আমি এদেরই একজন। আমাকে আলাদা করে ত তুমি কোনদিনই পাবে না। দীর্ঘকাল এ কি তোমার সইবে ? १२