পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস বন্দন বলিল, না সইলে মাহুষের মরার পথ ত চিরকাল খোলা থাকে দ্বিজুবাবু, কোন কয়েদখানাই ত বন্ধ করতে পারে না। কিন্তু আমাকেও আপনি কি বুঝেচেন জানিনে, কিন্তু আমার শ্বাশুড়ী, আমার জা, আমার ভাগুর, আমাদের ঠাকুর, অতিথিশাল, আমুদের আত্মীয়-স্বজন-সমাজ, এর থেকে আলাদা করে আমার স্বামীকে আমি একদিনও পেতে চাইনে। তিনি সকলের সঙ্গে এক হয়েই যেন আমার থাকেন। দ্বিজদাস বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিল, এ-সব ধারণা ত তোমাদের নয়, এ তুমি কার কাছে শিখলে বন্দন ? বন্দনা কহিল, কেউ আমাকে শেখায়নি দ্বিজুবাবু, কিন্তু মার কাছে থেকে, মুখুয্যেমশাইকে দেখে এ-সব আমার আপনিই মনে হয়েচে । এ-বাড়িতে সকল ব্যাপারে সকলের বড় মা, তার পরে মুখুয্যেমশাই, তার পরে দিদি, তারপরে আপনি, এখানে অন্নদারও একটা বিশেষ স্থান আছে । এ-বাডিতে জায়গা যদি কখনো পাই এদের ছোট হয়েই পাবো, কিন্তু সে আমবি একটুও অসঙ্গত মনে হবে না । শুনিয়া দ্বিজদাসের যেমন ভাল লাগিল তেমনি মন ব্যথায় ভরিয়া গেল । কিন্তু বন্দনার মনের কথা এমনি করিয়া জানিয়া লওয়া অন্যায়,—এ আলোচনা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন । জোর করিয়া নিজেকে সে কঠিন করিয়া বলিল, কিন্তু মাকে আমাদের এই সব কথা জানিয়ে কোন লাভ নেই । তিনি তোমাকে মেয়ের মত ভালবাসেন এ আমি জানি, তাই তার মনের একান্ত আশা ছিল তুমি হবে এ-বাড়ির ছোট বোঁ, তোমাদের দুই বোনের হাতে তার দুই ছেলেকে সঁপে দিয়ে যাবেন তিনি কৈলাসে, ফিরতে যদি আর না পারেন, সেই দুর্গম পথেই যদি আসে পরকালের ডাক, এই কথাটা মনে নিয়ে তখন নিশ্চিন্ত নিৰ্ভয়ে যাত্রা করতে পারবেন। তার বৃহৎ সংসারের দায়িত্ব হস্তাস্তরে আর কোন দিকে ফাক নেই। কিন্তু সে হবার আর জো নেই, তার মতে বাক্‌দান মানেই সম্প্রদান । ভালোবেসে যাকে সম্মতি দিয়েচে সে-ই তোমার স্বামী । বিয়ের মন্ত্র পড়া হয়নি বলে তাকে ত্যাগ করতেও তুমি পার, কিন্তু সেই শূন্ত আসন জুড়ে দয়াময়ীর ছেলে গিয়ে বসতে পারবে না । শুনিয়া বেদনায় বন্দনার মুখ পাণ্ডুর হইয়া গেল, জিজ্ঞাসা করিল, মা কি এইসব বলে গেছেন দ্বিজুবাৰু? দ্বিজদাস কহিল অন্ততঃ বলা অসম্ভব মনে করিনে বন্দনা। বৌদি বলছিলেন, মায়ের সবচেয়ে বেজেচে এই ব্যথাটা যে স্বধীর আমাদের জাত নয়,—আসলে তোমরা জাত মানো না। এ এত বড় বিভেদ যে, কিছু দিয়েই এ ফাক ভরানো যাবে না। আপনিও কি এই কথাই বলেন ? আমি ত তৃতীয় পক্ষ বন্দনা, আমার বলায় কি আসে যায় । রায়সাহেবের আহারের সময় নিকটবৰ্ত্তী হইয়া আসিতেছিল, বন্দন উঠিয়া ৭৩ . د سایه