পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ দাড়াইল। বাহির হইবার পূৰ্ব্বে কহিল, বাবার ছুটি শেষ হয়েচে, কাল তিনি চলে যাবেন । আমিও তার সঙ্গে চলে যাবে দ্বিজুবাৰু? দ্বিজদাস কহিল, এ-ও কি আমার বলবার বন্দন ? যদি যাও আমাকে তুমি ভুল বুঝে যে ও না । তুমি যাবার পরে তোমার হয়ে মাকে তোমার সমস্ত কথা জানাবো, লজ্জ করবে না। তারপরে রইল আজকের আমদের সন্ধ্যাবেলাকার স্মৃতি, আর রইল আমাদের বন্দে মাতরমের মন্ত্র। বন্দন। ইহার কোন উত্তর দিল না, নীরবে ঘর হইতে বহির হইয়া গেল । Ꮌ☾ নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিয়া বন্দনার অত্যন্ত গ্রানি বোধ হইতে লাগিল । সে কি নেশা করিয়াছে যে, নির্লজ্জ উপযাচিকার ন্যায় আপন হৃদয় উদঘাটিত করিয়া সমস্ত আত্ম-মর্য্যাদায় জলাঞ্জলি দিয়া আসিল ? অথচ দ্বিজদাস পুরু হইয়াও যেমন রহস্যাবৃত ছিল তেমনি রহিল। তাহার মুখের ভাবে না ছিল অগ্রাহ, না ছিল উল্লাস, সে না দিল আশা, না দিল সাস্তুনা । বরঞ্চ পরিহাসচ্ছলে এই কথাটাই বার বার করিয়া জানাইল যে সে তৃতীয় পক্ষ তাহার ইচ্ছা-অনিচ্ছ। এ-বাড়িতে অবাস্তর বিষয় । শুধু কি এই ? মার নাম করিয়া বলিল, বাকৃদান মানেই সম্প্রদান , বলিল, নিরপরাধ স্বধীরের শূন্য আসনে গিয়া দয়াময়ীর ছেলে বসিবে না। কিন্তু অপমানের পাত্র ইহাতেও পূর্ণ হইল না, তাহার চোখে জল দেখিয়া সে অবশেষে দয়াত্র-চিত্তে মাত্র এইটুকু কথা দিয়াছে যে বন্দনার এই বেহায়া-পনার কাহিনী মায়ের কাছে সে উল্লেখ করিবে । আবার এইখানেই কি শেষ ? দ্বিজদাসের কথার উত্তরে সে যাচিয়া বলিয়াছিল, এই পরিবারে যেখানে যে-কেহ আছে, সকলের ছোট হইয়াই সে আসিতে চায় । আর সে ভাবিতে পারিল না, সেইখানে স্তব্ধভাবে বসিয়া তাহার কেবলই মনে হইতে লাগিল, প্রকৃত সে অত্যন্ত ছোট হইয়া গেছে—এত ছোট যে আত্মঘাতী হইলেও এ হীনতার প্রায়শ্চিত্ত হয় না। বাহির হইতে কে আসিয়া জানাইল রায়সাহেব তাহাকে ডাকিতেছেন। উঠিয়া সে পিতার ঘরে গেল, সেখানে তাহাকে স্বারংবার জিদ করিয়া সম্মত করাইল, কালই,— তাহাদের বোম্বায়ে রওনা হইতে হইবে । অথচ, কথা ছিল বিপ্রদাস ফিরিয়া আসিলে রাত্রের ট্রেনে তাহার যাত্রা করিবেন । হঠাৎ এইভাবে চলিয়া যাওয়াটা যে ভালো ግቧ