পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস হইবে না ইহাতে সাহেবের সন্দেহ ছিল না-ছুটিও ছিল, স্বচ্ছদে থাকাও চলিত, তথাপি কন্যার প্রস্তাবে তাঁহাকে রাজী হইতে হইল । বিছানায় শুইয়। বন্দনীর চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল, তার পরে এক সময়ে সে ঘুমাইয়া পড়িল । সকালে উঠিয়া সে নিজের এবং বাপের জিনিস-পত্র সমস্ত গুছাইয়া'ফেলিল, ফোন করিয়া গাড়ি রিজার্ড করিল এবং বোম্বায়ে তার করিয়া দিল। সন্ধ্যায় ট্রেন, কিন্তু কিছুতেই যেন আর বিলম্ব সহে না । বেলা তখন নট বাজিয়াছে, অন্নদা ঘরে ঢুকিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল,-এ কি কাণ্ড ? বন্দন ময়লা কাপড়গুলো ভাজ করিয়া একটা তোরঙ্গে তুলিতেছিল, কহিল, আজ, আমরা যাবো । সে তো আজ নয় দিদিমণি । যাবার কথা যে কাল । না, আজই যাওয়া হবে । এই কথা বলিয়। সে কাজ করিতে লাগিল, মুখ তুলিল না ! অন্নদা এক মুহূৰ্ত্ত মৌন থাকিয়া বলিল, আপনি উঠুন আমি গুছিয়ে দিচ্ছি। আপনার কষ্ট হচ্ছে । কষ্ট দেখবার দরকার নেই, নিজের কাজে যাও তুমি । এ-বাড়ির সমস্ত লোকের প্রতি যেন তাহার ঘৃণ ধরিয়া গেছে । হেতু না জানিলেও একটা যে রাগারগির পালা চলিতেছে অন্নদা সেটা জানিত । হঠাৎ মা কাল বাড়ি চলিয়া গেলেন, আজ বন্দনাও তেমনি হঠাৎ চলিয়া যাইতে উদ্যত। কিন্তু রাগের বদলে রাগ করা অন্নদার প্রকৃতি নয়, সে যেমন সহিষ্ণু তেমনি ভদ্র, কিছুক্ষণ চুপ করিয়া দাড়াইয়া কুষ্ঠিতম্বরে কহিল, আমার দোষ হয়ে গেছে দিদিমণি, আজ সময়ে আমি উঠতে পারিনি। বন্দন মুখ তুলিয়া চাহিল, বলিল, আমি ত তার কৈফিয়ৎ চাইনি অন্নদা, দরকার হয় তোমার মনিবকে দিও। দ্বিজুবাবু তার ঘরেই আছেন, তাকে বলোগে। এই বলিয়া সে পুনরায় কাজে মন দিল । বন্দনাও পিতার একমাত্র সস্তান বলিয়া একটুখানি বেশী আদরেই প্রতিপালিত। সহ করার শক্তিটা তাহার কম । কিন্তু তাই বলিয়া কটু কথা বলার কুশিক্ষাও তাহার হয় নাই এবং হয়ত এত বড় কঠোর বাক্যও সে জীবনে কাহাকেও বলে নাই। তাই বলিয়া ফেলিয়াই সে মনে মনে লজ্জা বোধ করিতেছিল, এমনি সময়ে অন্নদাই সলজ্জ মৃদুকণ্ঠে কহিতে লাগিল, ডাক্তাররা চলে গেলেন, ফসর্ণ হয়েচে দেখে ভাবলুম আর শেবে না, গুইনিও, কিন্তু দেওয়ালে ঠেস্ দিয়ে বসতে কি করে চোখ জড়িয়ে এলো, কোথা, দিয়ে বেলা হয়ে গেল টের পেলুম না। মানবের কথা বলচেন ግ¢