পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৮৪

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দিদিমণি, কিন্তু আপনিও কি আমার মনিব নন ? বলুন ত, এ অপরাধ আর কখনও কি আমার হয়েছে? উঠুন আমি গুছিয়ে দিই। শেষের দিকে কথাগুলো বোধ হয় বন্দনার কানে যায় নাই, অন্নদার মুখের পানে চাহিয়া বলিল, ডাক্তার চলে গেলেন মানে ? 赛 অন্নদা কহিল, কাল রাত্তিরে দ্বিজুর ভারি অস্থখ গেছে। এখানে এসে পর্য্যস্ত ওর শরীর খারাপ, কিন্তু গ্রাহ্য করে না । কাল মা’দের নিয়ে বাড়ি যাবার কথায় আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বললে, মা যেন না জানতে পারেন, কিন্তু দাদাকে বলে আমার যাওয়াটি মাপ করে দাও অম্বুদিদি, আজ যেন আমি উঠতে পরিচিনে এমনি দুৰ্ব্বল । ওকে মানুষ করেছি, ওর সব কথা আমার সঙ্গে ! ভয় পেয়ে বললুম, সেকি কথা! শরীর খারাপ ত লুকোচ্চো কেন ? ওর স্বভাবই হ’লে হেসে উড়িয়ে দেওয়া, তা সে যত গুরুতরই হোক। তেমনি একটুখানি হেসে বললে, তুমি ওদের বিদেয় করো না দিদি, তার পরে আপনি চাঙ্গ হয়ে উঠবো । ভাবলুম, মার সঙ্গে ওর বনে না, কোথাও সঙ্গে যেতে চায় না, এ বুঝি তারই একটা ফন্দি। তাই কিছু আর বললুম না। বড়দাদাবাবু ওঁদের নিয়ে চলে গেলেন । তার পরে সমস্ত দিনটা ও শুয়ে কাটালে, কিছু খেলে না ; দুপুরবেলা গিয়ে জিজ্ঞাসা করলুম, দ্বিজু, কেমন আছ ? বললে, ভাল আছি! কিন্তু ওর চেহারা দেখে তা মনে হলো না! ডাক্তার আনতে চাইলুম, দ্বিজু কিছুতে দিলে না, বললে, কেন মিছে দাদার অর্থদণ্ড করাবে দিদি, তোমার অপব্যয়ের কথা শুনলে গিল্পী রাগ করবেন । মায়ের উপর এ অভিমান ওর আর গেল না । সমস্ত দিন খেলে না, বিছানায় শুয়ে কাটালে, বিকেলে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলুম, দ্বিজু, শরীর যদি সত্যই খারাপ নেই তবে সমস্ত দিন শুয়ে কাটাচ্ছোই বা কেন ? ও তেমনি হেসে বললে, অমুদিদি, শাস্ত্রে লেখা আছে শুয়ে থাকার মত পুণ্য কাজ জগতে নেই, এতে কৈবল্য মেলে। একটু পরিত্রিক মঙ্গলের চেষ্টায় আছি। তোমার ভয় নেই। সব তাতেই ওর তামাসা, কথায় পরিবার জো নেই, রাগ করে চলে এলুম, কিন্তু ভয় ঘুচলে না। ও একখানা বই টেনে পড়তে শুরু কর দিলে! অন্নদা একটু থামিয়া বলিতে লাগিল, রাত্রি বোধ করি তখন বারোট, আমার দোরে ঘা পড়ল। কে রে ? বাইরে থেকে জবাব এলো, অনুদিদি আমি ! দোর খোলো । এত রাত্রে দ্বিজু ডাকে কেন, ব্যস্ত হয়ে দোর খুলে বেরিয়ে এলুম,—দ্বিজুর, এ কি মূৰ্ত্তি ! চোখ কোটরে ঢুকেচে, গলা ভাড়া, শরীর কঁপিচে; কিন্তু তবু হাসি। বললে, দিদি, মানুষ করেছিলে তাই তোমার ঘুম ভাঙালুম। যদি চোখ বুজতেই হয় তোমার কোলেই মাথা রেখে বুজবো। এই বলিয়৷ অন্নদা ঝর ঝর করিয়া কাদিয়া ফেলিল । তাহার কান্না যেন থামিতে চাহে না এমনি ভিতরের অদম্য আবেশ । আপনাকে সামলাইতে তাহার অনেকক্ষণ লাগিল, তারপরে কহিল, বুকে করে তাকে ঘরে