পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস মিলে খুজে ধরে আনে। কিন্তু এমন করেও ত চিরদিন কাটতে পারে না দিদি, ওরও বিয়ে দিতে হবে, ছেলে পুলে হবে, তখন যে এ অবস্থায় দেউলে হতে হবে! বন্দনা কহিল, একথা তোমরা ওকে বলে না কেন ? অন্নদা কহিল, ঢের বলা হয়েচে, কিন্তু ও কান দেয় না । বলে, তোমাদের ভাবনা কেন ? দৈউলেই যদি হই বৌদিদি ত আর দেউলে হবে না, তখন সকলে মিলে ওঁর ঘাড়ে গিয়ে চাপবো । বন্দন৷ হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিল, মেজদি কি বলেন ? অন্নদা কহিল, দেওরের উপর তার আদরের শেষ নেই। বলেন, আমরা খাবে। আর দ্বিজু উপোস করবে নাকি ? আমার পাচশো টাকা তো আর কেউ ঘুচোতে পারবে না, আমাদের গরিবী-চালে তাতেই চলে যাবে। বড়বাবু তার লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে সুখে থাকুন আমরা চাইতে যাবো না । শুনিয়া বন্দনার কি যে ভালো লাগিল তাহার সীমা নাই। যে বলিয়াছে সে তাহারই বোন ! অথচ যে সমাজে যে আবহাওয়ার মধ্যে সে নিজে মানুষ সেখানে এ কথা কেহ বলে না, হয়ত ভাবিতেও পারে না । বলার কখনো প্রয়োজন হয় কি না তাই বা কে জানে । কিন্তু অন্নদা যাহা বলিতেছিল সে যেন পুরাকালের একটা গল্প। ইহারা একান্নবৰ্ত্তী পরিবার কেবল বাহিরের আকৃতিতে নয়, ভিতরের প্রকৃতিতে । অন্নদা এখানে শুধু দাসী নয়, দ্বিজদাসের সে দিদি । কেবল মৌখিক নয়, আজও সকল কথা তাহার ইহারই কাছে । এই অন্নদার বাবা এই পরিবারের কৰ্ম্মে গত হইয়াছে, তাহার ছেলে এখানে মানুষ হইয়া এখানেই কাজ করিয়া জীবিকানিৰ্ব্বাহ করিতেছে। অন্নদার অভাব নাই, তবু মায়া কাটাইয়া তাহার যাইবার জো নাই। এই সমৃদ্ধ বৃহৎ পরিবারে অনুবদ্ধ এমন কতজনের পুরুষানুক্রমের ইতিহাস মিলে । দয়াময়ীর অবাধ্য সস্তান দ্বিজদাসও কাল বলিয়াছিল, তাহার মা, দাদা, বৌদি, তাহাদের গৃহদেবতা, অতিথিশালা সমস্ত লইয়াই সে,—তাহাদের হইতে পৃথক করিয়া বন্দনার কোনদিন তাহাকে পাইবার সম্ভাবনা নাই। তখন বন্দনা অস্বীকার করে নাই বটে, তবু আজই এ কথার যথার্থ তাৎপৰ্য্য বুঝিল । কথা শেষ হয় নাই, অনেক কিছু জানিবার আগ্রহ তাহার প্রবল হইয়া উঠিল, কিন্তু বাধা পড়িল । চাকর আসিয়া জানাইল রায়সাহেব ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছেন, ছ’টা বাজিয়াছে। যাত্রা করিবার সময় একঘণ্টার বেশি নাই। প্রস্তুত হইবার জন্য বন্দনাকে উঠিতে হইল। যথাসময়ে রায়সাহেব নীচে নামিলেন, নামিতে নামিতে মেয়ের নাম ধরিয়া একটা ইকি দিলেন, বন্দনার কানে আসিয়া তাহা পৌঁছিল। অন্যায় যত বড় হোক, অনিচ্ছা ዓ?