পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দিয়া বিছানায় বসিয়া, মুখ দেখিয়া মনে হয় না যে অমুখ গুরুতর। মনের মধ্যে স্বস্তি বোধ করিয়া বলিল, মুখুয্যেমশাই, নমস্কার করি। মেজদি উপস্থিত থাকলে রাগ করতেন, বলতেন, গুরুজনের পায়ের ধুলো নিয়েই প্রণাম করতে। কিন্তু ছুতে ভয় করে পাছে ছোয়া যান । বিপ্রদাস কিছুই না বলিয়া শুধু একটু হাসিল। বন্দনা বলিল, ডেকে পাঠিয়েচেন কেন,—সেবা করতে ? অনুদি বলছিলো, ওষুধ খাওয়াবার সময় হয়েছে। কিন্তু একি ব্যাপার! ডাক্তারী ওষুধের শিশি যে ! কবরেজের বড়ি কই ? ডাক্তার ডাকার বুদ্ধি দিলে কে আপনাকে ? বিপ্রদাস কহিল, আমাদের চলতি ভাষায় ডেপো বলে একটা কথা আছে তার মানে জানো বন্দন ? বন্দন বলিল, জানি মশাই জানি । মানুষ হয়ে যারা মানুষকে ঘেন্না করে, ছোয় না, তাদের বলে । তাদের চেয়ে ড়ে পো সংসারে আর কেউ আছে না কি ? বিপ্রদাস বলিল, আছে । যাদের সত্যি-মিথ্যে যাচাই করবার ধৈর্য্য নেই, অকারণে নিৰ্দ্দোফীকে ফুটিয়ে যারা বাহাদুরি করে তারা, তাদের দলের মস্ত বড় পাণ্ডা তুমি নিজে । অকারণে কোন নির্দোষী ব্যক্তিকে হুল ফুটিয়েচি আপনি বলে দিন ত শুনি ? আমাকে বলে দিতে হবে না বন্দনা, সময় এলে নিজেই টের পাবে। আচ্ছ, সেই দিনের প্রতীক্ষা করে রইলুম, এই বলিয়া বন্দন খাটের কাছে একটা চৌকি আনিয়া লইয়া বসিল, বলিল, এখন বলুন নিজে কেমন আছেন ? ভালো আছি, কিন্তু জরটা রয়েচে । রাত্রে আর একটু বাড়বে বলে মনে হয় ! কিন্তু আমাকে ডেকে পাঠালেন কেন ? আমাকে আপনার কিসের দরকার ? দরকার আমার নয়, অমুদিদির, সেই বড় ভয় পেয়েচে । তার মুখে শুনলাম পরও তোমার বোনের বিয়ে, চুকে গেলে একদিন এসো। আমার জবানি তোমার মেজদি কিছু খবর পাঠিয়েছেন সেগুলো তোমায় শোনাবো । আজ পারেন না ? না, আজ নয় । বন্দনা মিনিট-দুই চুপ করিয়া বসিয়া রহিল, তার পরে কহিল, মুখুয্যেমশাই, অসুখ আপনার বেশি নয়, দু’দিনেই সেরে উঠবেন । আমি জানি আমাকে প্রয়োজন নেই, তবুও আপনার সেবার ভান করেই আমি থাকবে, সেখানে ফিরে যাবে। না। অামার তোরঙ্গটা আনতে লোক পাঠিয়ে দিয়েচি, আপনি আপত্তি করতে পারবেন না ।