পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তাহার বিগত দিবারাত্রের সমস্ত পুস্ত্রীভূত বেদন তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও এইবার গলিয়া ঝর ঝর করিয়া পড়িতে লাগিল । এমনি সময় ঠিক দ্বারের বাহিরেই জুতার শব্দ শোনা গেল এবং পরক্ষণেই মহিম ঘরে ঢুকিতে ঢুকিতে কহিল, কি হে স্বরেশ, চা-টা খেলে ? স্বরেশ জবাব দিতে পারিল না। সে কোনমতে মুখ নীচু করিয়া কোচার খুটে চোখ মুছিয়া ফেলিল, এবং অচলা আঁচলে মুখ ঢাকিয়া দ্রুতবেগে মহিমের পাশ দিয়া বাহির হইয়া গেল। মহিম চৌকাঠের ভিতর এক পা এবং বাহিরে এক পা দিয়া হতবুদ্ধির মত দাড়াইয়া রহিল। ›ዓ আপনাকে সংবরণ করিয়া মহিম ঘরে ঢুকিয়া একখানা চৌকি টানিয়া লইয়া উপবেশন করিল। মানব-চিত্ত যে অবস্থায় সৰ্ব্বাপেক্ষা অসংকোচে ও অবলীলাক্রমে মিথ্যা উদ্ভাবন করিতে পারে, স্বরেশের তখন সেই অবস্থা । সে চট্‌ করিয়া হাত দিয়া চোখ মুছিয়া ফেলিল ; সলজ্জ হাঙ্গে উদারভাবে স্বীকার করিল যে, সে বাস্তবিকই ভারি দুর্বল হইয় পড়তেছে। কিন্তু মহিম সেজন্য কিছুমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ করিল না, এমন কি তাহার হেতু পৰ্য্যন্ত জিজ্ঞাসা করিল না । স্বরেশ তখন নিজেই নিজের কৈফিয়ৎ দিতে লাগিল। কহিল, যিনি যাই বলুন মহিম, এ আমি জোর করে বলতে পারি যে, এদের চোখে জল দেখলে কোথা থেকে ধেন নিজেদের চোখেও জল এসে পড়ে—কিছুতে সামলানো যায় না । আমি না গিয়ে পড়লে কেদারবাবু ত এ-যাত্রা কিছুতেই বাঁচতেন না, কিন্তু বুড়ে আচ্ছা বদমেজাজী লোক হে মহিম, একটিমাত্র মেয়ে, তবুও তাকে খবর দিতে দিলে না। বিয়ের দিন থেকে সেই যে ভদ্রলোক চটে আছে, সে চট্য আর জোড়া লাগল না। বললুম, যা হবার, সে ত হয়েই গেছে— মহিম জিজ্ঞাসা করিল, চ পেয়েচ ত হে ? মুরেশ ঘাড় নাড়িয়া কহিল, ই পেয়েছি । কিন্তু বাপের কাছে এ-রকম ব্যবহার পেলে কার চক্ষে না জল আসে বল ? পুরুষমাহুষই সব সইতে পারে না, এ ত স্ত্রীলোক । . মহিম বলিল, তা বটে । রাত্রে তোমার শোবার কোন ব্যাঘাত হয়নি স্বয়েশ, বেশ ঘুমোতে পেরেছিলে ? নতুন জায়গা— 7:Հ