পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शृंझ्मांह করিয়া কিছুতেই তাহার চক্ষে নিদ্ৰা আসিল না। উঠিয়া গিয়া ঘুম ভাঙ্গাইয় তাহাকে তুলিয়া আনা উচিত কি না, ভাবিতে ভাবিতে দ্বিধা করিতে করিতে অনেক রাত্রে বোধ করি সে কিছুক্ষণের জন্য তন্দ্রামগ্ন হইয়া পড়িয়াছিল, সহসা মুদ্রিত-চক্ষে তীব্র আলোক অনুভব করিয়া চোখ মেলিয়া চাহিল। শিয়রের খোলা জানাল দিয়া এবং চালের ফাক দিয়া অজস্র আলোক ও উৎকট ধূমে ঘর ভরিয়া গিয়াছে এবং অত্যন্ত সন্নিকটে এমন শব্দ উঠিয়াছে যাহা কানে প্রবেশমাত্রই সৰ্ব্বাঙ্গ অসাড় করিয়া দেয় । কোথায় সে আগুন লাগিয়াছে, তাহা নিশ্চয় বুঝিয়াও ক্ষণকালের জন্ত সে হাত-পা নাড়িতে পারিল না। কিন্তু সেই কয়েকটা মুহূর্তের মধ্যে তাহার মাথার ভিতর দিয়া যেন ব্ৰহ্মাও খেলিয়া গেল ! লাফাইয়া উঠিয়া, দ্বার খুলিয়া বাহিরে আসিয়া দেখিল, রান্নাঘর এবং যে ঘরে আজ অচলা ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, তাহারই বারান্দার একটা কোণ বিদীর্ণ করিয়া প্রধূমিত অগ্নিশিখা উপরের সমস্ত জাম গাছটাকে রাঙা করিয়া ফেলিয়াছে। পল্লীগ্রামে খড়ের ঘরে আগুন ধরিলে তাহা নিবাইবার কল্পনা করাও পাগলামি, সে চেষ্টাও কেহ করে না ; পাড়ার লোক, যে যাহার জিনিসপত্র ও গরু-বাছুর সরাইতে ছুটাছুটি করে, এবং ভিন্ন পাড়ার লোক একদিকে মেয়ের এবং একদিকে পুরুষের সমবেত হইয়া অত্যন্ত নিরুবেগে হায় হায় কবিয়া এবং কি পরিমাণের দ্রব্য সভার দক্ষ হইতেছে এবং কি করিয়া এ সৰ্ব্বনাশ ঘটিল তাঁহাই আলোচনা করিয়া সমস্ত লাড়িটা ভস্মসাৎ হওয়া পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা করে । তার পরে ঘরে ফিরিয়া হাত-পা ধুইয়া বাকী রাত্রিটুকু বিছানায় গড়াইয়া লইয়া পুনরায় সকালবেলা একে একে গাড়ু হাতে দেখা দেয় ; এবং আলোচনার জেরটুকু সকালের মত শেষ করিয়া বাড়ি গিয়া স্নানাহার করে। কিন্তু একজনের গৃহপ্রাঙ্গণের বিরাট ভস্মতৃপ আর একজনের নিয়মিত জীবনযাত্রার লেশমাত্র ব্যাঘাত ঘটাইতে পারে না । মহিম পল্লীগ্রামের লোক, সকল কথাই সে জানিত । তাই নিরর্থক চেঁচামেচি করিয়া অসময়ে পাড়ার লোকের ঘুম ভাঙ্গাইয়। দিল না। বিন্দুমাত্র প্রয়োজনও ছিল না, কারণ তাহার আম কঁঠালের এত বড় বাগানটা অতিক্রম করিয়া এই অগ্ন্যুৎপাত যে আর কাহারও গৃহ স্পর্শ করিবে, সে সম্ভাবনা ছিল না। বাহিরের সারে যে কয়টা ঘরে স্বরেশ এবং চাকর-বকিরেরা নিদ্রিত ছিল, অগ্নিস্পৃষ্ট হইবার তাহাদের বিলম্ব ছিল । বিলম্ব ছিল না শুধু অচলার ঘরটার। সে তাহারই দ্বারে সজোরে করাঘাত করিয়া ভাকিল, অচলা । অচলা ঠিক যেন জাগিয়াছিল, এমনিভাবে উত্তর দিল, কেন ? মহিম কহিল, দোর খুলে বেরিয়ে এস। অচলা শাস্তকণ্ঠে জবাব দিল, কি হবে ? আমি ত বেশ আছি । وهي