পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মহিম কহিল, দেরি করে না, বেরিয়ে এসো—বাড়িতে আগুন লেগেচে । প্রত্যুত্তরে অচলা একবার ভয়ঙ্গড়িত কণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিল, তার পরে সমস্ত চুপচাপ। মহিমের পুনশ্চ ব্যগ্র আহানে সে আর সাড়াও দিল না। ঠিক এই ভয়ই মহিমের ছিল ; কারণ বাটীতে আগুন লাগা যে কি ব্যাপার, তাহার কোনপ্রকার ধারণাই অচলায় ছিল না । মহিম ঠিক বুঝিল, ইতিপূৰ্ব্বে সে চোখ বুজিয়াই কথা কহিতেছিল, কিন্তু চোখ মেলিয়া যে দুখ তাহাকেও কিছুক্ষণের জন্য অবশ করিয়া ফেলিয়াছিল, সেই অপৰ্য্যাপ্ত আলোকে উদ্ভাসিত সমস্ত ঘরট চোখে পড়িবামাত্র অচলারও সংজ্ঞা বিলুপ্ত হইয়াছে । কিন্তু এই দুর্ঘটনার জন্য মহিম প্রস্তুত হইয়াছিল। সে একটা কপাট টানিয়া উচু করিয়া হাসকলটা খুলিয়া ফেলিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল এবং মূৰ্ছিত স্ত্রীকে বুকে তুলিয়া লইয়া অবিলম্বে প্রাঙ্গণে আসিয়া দাড়াইল । এইবার এই বাটীর অন্য সকলকে সজাগ করিবার জন্য নাম ধরিয়া চীৎকার করিতে লাগিল । স্বরেশ পাংশুমুখে বাহির হইয়া আসিল, যন্থ প্রভৃতি অপর সকলেও দ্বার খুলিয়া ছুটিয়া বাহির হইয়া পডিল। তাহার পরেই একটা প্রচণ্ড শব্দে অচলা সচেতন হুইয়া দুই বাহু দিয়া স্বামীর কণ্ঠ প্রাণপণ-বলে জড়াষ্টয়া ধরিয়া ফুপাইয়া কাদিয়া উঠিল । মহিম সকলকে লষ্টয়া যখন বাহিরের খোলা জায়গায় আসিয়া পড়িল, তখন বড় ঘরের চালে আগুন পরিয়াছে। এইবার তাহার মনে পড়িল, আচলার অলঙ্কার প্রভৃতি দামী জিনিস যাহা কিছু আছে, সমস্তই এই ঘরে এবং আর মুহূর্ত বিলঙ্গ করিলে কিছুই বাচানো যাইবে না । অচলা প্রকৃতিস্থ হইয়াছিল , সে সজোরে স্বামীর হাত চাপিয়া ধরিয়া ললিল, না, সে হবে না । প্রতিশোধ নেবার এই কি সময় পেলে ? কিছুতেই ওর মধ্যে তোমাকে আমি যেতে দেব না। যাক, সব পুড়ে যাক । না গেলে চলবে না অচলা, বলিয়া জোর করিয়া হাত ছাড়াইয়া লইয়া মহিম সেই জমাট ধূমরাশির মধ্যে দ্রুতবেগে গিয়া প্রবেশ করিল। যন্থ চেচাইতে চেচাইতে সঙ্গে সঙ্গে ছুটিল । স্বরেশ এতক্ষণ পর্যন্ত অভিভূতের মত চাহিয়া অদূরে দাড়াইয়াছিল; অকস্মাৎ সম্বিৎ পাইয়া, সে পিছু লইবার উপক্রম করিতেই অচলা তাহার ক্টোচার খুঁট ধরিয়া ফে লয়৷ কঠোর-কণ্ঠে কহিল, আপনি যান কোথায় ? সুরেশ টানাটানি করিয়া বলিল, মহিম গেল যে— অচলা তিক্তস্বরে বলিল, তিনি গেলেন তার জিনিস বঁাচাতে। আপনি কে ? আপনাকে যেতে আমি কোনমতেই দেব না । 33 e