পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९ বছর-পাঁচেক পরে দুই বন্ধুতে এইরুপ কথাবাৰ্ত্ত হইতেছিল। তোমার উপর আমার যে কত বড় শ্রদ্ধা ছিল মহিম, তা বলতে পারি না । বলবার জন্য তোমাকে পীড়াপীড়ি করচি না মুরেশ । , সে শ্রদ্ধা বুঝি আর থাকে না। না থাকলে তোমাকে দণ্ড দেবে, এমন ভয়ত কখনও দেখাইনি। তোমাকে কপটতা দোষ দিতে তোমার অতি-বড় শত্রুও কখনও পারত না । শত্রু পারত না বলে কাজটা যে মিত্রও পারবে না, দর্শন-শাস্ত্রের এমন অনুশাসন ত নেই। ছি ছি, শেষকালে কি না একটা ব্রাহ্ম-মেয়ের কাছে ধরা দিলে ? কি আছে ওদের ? ঐ শুকনো কাঠপানা চেহারা, বই মুখস্থ করে গায়ে কোথাও এক ফোটা রক্ত পর্য্যস্ত যেন নেই। ঠেলা দিলে আধখানা দেহ খসে পড়বে ব'লে ভয় হয়—গলার স্বরটা পৰ্য্যন্ত এমনি চি চি করে যে শুনলে ঘৃণা হয় । তা হয় সত্য। দেখ মহিম, ঠাট্টা কর গে তোমাদের পাড়াগায়ের লোককে, যে ব্রাহ্ম-মেয়ে কখনো চোখে দেখেনি ; মেয়েমানুষ ইংরাজীতে ঠিকানা লিখতে পারে শুনলে যারা আশ্চৰ্য্য অবাক হয়ে যায়—তিনি চলে গেলে যারা সসন্ত্রমে দূরে সরে দাড়ায়। বিস্ময়ে অভিভূত করে দাও গে তোমার গ্রামের লোককে, যারা একে দেব-দেবী মনে করে মাথা লুটিয়ে দেবে ; কিন্তু আমাদের বাড়ি ত পাড়াগাঁয়ে নয়—আমাদের ত অত সহজে ভুলানো যায় না । আমি তোমাকে শপথ করে বলচি সুরেশ, তোমাদের সহরের লোককে ভূলোবার আমার কোন দুরভিসন্ধি নেই। আমি তাকে আমাদের পাড়াগায়ে নিয়েই রাখব। তাতে ত তোমার আপত্তি নেই ? স্বরেশ রাগিয়া উঠিয়া বলিতে লাগিল, আপত্তি নেই ? শত, সহস্ৰ, লক্ষ, কোটি আপত্তি আছে। তুমি সমস্ত জগতের বরেণ্য পূজনীয় হিন্দু সন্তান হয়ে কি না একটা রমণীর মোহে জাত দেবে ? মোহ ! একবার তার জুতো মোজা সোঁখীন পোষাক ছাড়িয়ে নিয়ে আমাদের গৃহলক্ষ্মীদের রাঙা শাড়ীখানা পরিয়ে দেখ দেখি, মোহ কাটে কি না! তখন ঐ নিৰ্জ্জীব কাঠের পুতুলটার রূপ দেখে তোমার ভুল ভাঙে কি না ! কি আছে তার ? কি পারে সে ? বেশ ত, তোমার যদি সেলাই আর পশমের কাজই এত দরকার কলকাতা সহরে দর্জির ত অভাব নেই। একখানা চিঠির