পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পরে জামাকে সত্যি এর জঙ্গে অস্ত্রতাপ করতে হতো, সব ঠিক, কিন্তু স্থাখে, অপরের মনের ইচ্ছে বুঝে নেবার মত যত বুদ্ধিই তোমার থাক, তোমাকে বুঝিয়ে দেবারও জিনিস আছে। স্ত্রীর জিনিস জোর করে নেওয়া ত দূরের কথা, হাত পেতে নেবার সম্বল তোমারই বা কি আছে ? আর তোমার সঙ্গে আমি তর্ক করব না। এটুকু বিবেক-বুদ্ধি যে এখনো তোমাতে বাকী আছে, আজ থেকে তাই আমার সাধনা। কিন্তু যেখানেই থাকি, একদিন-ন-একদিন তোমাকে সব কথা বুঝতেই হবে। হবেই হবে। বলিয়া সে হাত দিয়া নিজের মুখ চাপিয়া ধরিয়া কান্না রোধ করিল। নটার ট্রেনে স্বরেশও বাটী ফিরিতেছিল। গত রাত্রের অগ্নিকাও তাহাকে কেমন যেন একরকম করিয়া- দিয়াছিল। কাহারও সহিত কথা কহিবার যেন শক্তিই তাহাতে ছিল না। গাড়ি আসিতে এখনও কিছু বিলম্ব ছিল ; সুরেশ মহিমকে স্টেশনের এক প্রান্তে ডাকিয়া লইয়া গিয়া ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া বলিয়া উঠিল, মহিম, আগুন লাগার জন্তে আমাকে ত তুমি সন্দেহ করোনি ? মহিম তার হাত দুটো সজোরে ধরিয়া ফেলিয়া শুধু বলিল, ছিঃ ! - স্বরেশের দুই চোখ ছল ছল করিতে লাগিল । বাস্পরুদ্ধ-স্বরে বলিল, কাল থেকে এই ভয়ে আমার শাস্তি নেই মহিম । মহিম নীরবে শুধু তাহার হাতের মধ্যে চাপ দিল । তাহার পরে কহিল, স্বরেশ, একটা সত্যকার অপরাধ অনেক মিথ্যা অপরাধের বোঝা বয়ে আনে । কিন্তু অনেক দুঃখ পেয়ে তুমি যাই কর না কেন, যাকে ‘ক্রাইম' বলে, সে তুমি কোনদিন করতে পার না বলে আজ আমি বিশ্বাস করি । একটুখানি থামিয়া কহিল, সুরেশ, তুমি ভগবান মানো না বটে, কিন্তু যে যথার্থ মানে সে অহৰ্নিশ প্রার্থনা করে, এ বিশ্বাস তিনি যেন তার না ভেঙ্গে দেন । ট্রেন আসিয়া পড়িল । মেয়েদের গাড়িতে অচলা এবং তাহার দাসীকে তুলিয়া দিয়া মহিম স্বরেশের কাছে আসিতেই সে জানালা দিয়া হাত বাড়াইয়া তাহার ডান হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া কহিল, তোমার কালকের ক্ষতিটা পূর্ণ করে দেবার প্রার্থনাটা আমার কিছুতেই মঞ্জুর করলে না, কিন্তু ভগবান তোমার প্রার্থনা যেন মঞ্জুর করেন ভাই । আমাকে যেন আর তিনি ছোট না করেন, বলিয়াই সে হাত ছাড়িয়া দিয়া মুখ ফিরাইয়া বসিল । ওদিকে জানালায় মুখ রাখিয়া অচলা যদুর সঙ্গে এতক্ষণ চুপি চুপি কি কথা কহিতেছিল, মহিম নিকটে আসিতেই জিজ্ঞাসা করিল, মৃণালদিদির স্বামী নাকি আজ মারা গেছেন ? মহিম ঘড়ি নাড়িয়া বলিল, ঘণ্টা-খানেক পূৰ্ব্বে মারা গেছেন শুনলাম। 为》●