পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বলিল, ওখান থেকে জব্বলপুরেও যেতে পারে, কলকাতায়ও ফিরে আসতে পারে । অচলা ধীরে ধীরে মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আমরা কোথায় যাচ্ছি ? সে অশ্র-কলঙ্কিত মুখের উপর দুঃখ-নিরাশার চরম প্রতিমূৰ্ত্তি আর একবার স্বরেশের চোখে পড়িল। তাহার ভুল যে কত বড় হইয়া গিয়াছে, এ-কথা আর তাহার অগোচর ছিল না এবং ইহার জন্য আজ সে নিজেকে হত্যা করিয়া ফেলিতেও পারিত। কিন্তু যাহার সহস্ৰ ছলনা তাহার সত্য দৃষ্টিকে এমন করিয়া আবৃত করিয়া এই ভুলের মধ্যেই বারংবার অঙ্গুলি-নির্দেশ করিয়াছে, সেই ছলনামীর বিরুদ্ধেও তাহার সমস্ত অন্তর একেবারে বিষাক্ত হইয়া উঠিয়াছে। তাই আজ সে অচলার জিজ্ঞাসার উত্তরে তিক্তস্বরে বলিয়া উঠিল, বোধ হয় আমরা সশরীরে নরকেই যাচ্ছি। যে অধঃপথের পথ দেখিয়ে এতদূর টেনে এনেচ, তার মাঝখানেই ত ইচ্ছে করলেই দাড়াবার যায়গা পাওয়া যাবে না । এখন শেষ পৰ্য্যন্ত যেতেই হবে। কথা শুনিয়া অচলার আপাদ-মস্তক একবার কঁপিয়া উঠিল, তার পরে সে নিরুত্তরে মাথা হেঁট করিয়া রহিল । যে মিথ্যাচারী কাপুরুষ পরস্ত্রীকে এমন করিয়া বিপথে ভুলাইয়া আনিয়াও অসঙ্কোচে এত বড় নিলজি অপবাদ মুখ দিয়া উচ্চারণ করিতে পারে, তাহাকে বলিবার আর কাহার কি থাকে ! সুরেশ আবার পায়চারি করিতে লাগিল। বোধ হয় এই পাষাণ-প্রতিমার স্বমুখে দাড়াইয়া কথা কহিবার তাহার শক্তি ছিল না। বলিতে লাগিল, তুমি এমন ভাব দেখাচ্ছে, যেন একা তোমারই সৰ্ব্বনাশ ! কিন্তু সৰ্ব্বনাশ বলিতে যা বোঝায়, তা আমার পক্ষে কোথায় গিয়ে দাড়িয়েচে জানো ? আমি তোমাদের মত ব্ৰহ্মজ্ঞানী নই, আমি নাস্তিক। আমি পাপপুণ্যের ফাক আওয়াজ করিনে, আমি নিরেট সত্যিকার সর্বনাশের কথাই ভাবি ! তোমার রূপ আছে, চোখের জল আছে, মেয়েমানুষের যা-কিছু অস্ত্র-শস্ত্র তোমার তুণে সে-সব প্রয়োজনেরও অতিরিক্ত আছে, তোমার কোন পথেই বাধা পড়বে না। কিন্তু আমার পরিণাম কল্পনা করতে পারো ? আমি পুরুষমানুষ—তাই আমাকে জেলের পথ বন্ধ করতে নিজের হাতে এইখানে গুলী করতে হবে । বলিয়া সুরেশ থমকিয় দাড়াইয়া বুকের মাঝখানে হাত দিয়া দেখাইল । অচলা কি একটা বলিতে উষ্ঠত হইয়া মুখ তুলিয়াও নিঃশবে মুখ ফিরাইয়া লইল। কিন্তু তাহার চোখের দৃষ্টিতে স্বণ যে উপচাইয়া পড়িতেছিল, তাহা দেখিতে পাইয়া সুরেশ ক্রোধে জলিয়া উঠিয়া কহিল, ময়ূরপুচ্ছ পাখায় গুজে দাড়কাক কখনো ময়ুর হয় না অচলা ৷ ও চাহনি আমি চিনি, কিন্তু সে তোমাকে সাঙ্গে না । যাকে সাজতে, সে মৃণাল, তুমি নয় ! তুমি অস্থর্যাম্পশু হিন্দুর ঘরের Soo