পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই বৃদ্ধ একটুখানি হাসিয়া বলিলেন, স্বচ্ছন্দে করতে পারেন। আপনার নাম আমি তার মুখে শুনেছি। সুরেশ কহিল, মহিমের সঙ্গে আপনার কন্যার বিবাহ স্থির হয়ে গেছে ? বৃদ্ধ কহিলেন; হুঁ, সে একরকম স্থির বৈ কি । মুরেশ কহিল, কিন্তু মহিম ত আপনাদের ব্রাঙ্গ-সমাজভূক্ত নয়। তবুও বিবাহ দেবেন ? * বৃদ্ধ চুপ করিয়া রছিলেন। সুরেশ কহিল, অচ্ছ সে কথা এখন থাক ; কিন্তু তার কিরূপ সঙ্গতি, স্ত্রী-পুত্র প্রতিপালন করবার যোগ্যতা আছে কি না, পাড়াগায়ে বিরুদ্ধ হিন্দুসমাজের মধ্যে ভাঙা মেটে-বাড়ির মধ্যে আপনার কন্যা বাস করতে পারবেন কিনা, না পারলে তখন মহিম কি উপায় করবে, এই সকল চিন্তা ক’রে দেখেছেন কি ? বৃদ্ধ কেদার মুখুয্যে একবার সোজা হইয়া উঠিয়া বসিলেন । বলিলেন, কই, এ-সকল ল্যাপার ত আমি শুনিনি । মহিম কোনোদিন ত এসব কথা বলেননি ? সুরেশ কহিল, কিন্তু আমি এ সকল চিস্ত ক’রে দেখেচি, মহিমকে বলেচি এবং অজ এই সকল অপ্রিয় প্রসঙ্গ উত্থাপন করবার জন্যেই আপনার নিকট উপস্থিত হয়েচি । আপনার কন্যার বিষয় আপনি চিন্তা করবেন ; কিন্তু আমার পরম বন্ধু যে এই দায়িত্ব কাধে নিয়ে অসহ্য ভারে চিরদিন জীবন্মত হয়ে থাকবেন, সে ত আমি কোনমতেই ঘটতে দিতে পারিনে । কেদারবাবু পাংশুমুখে কহিলেন, আপনি বলেন কি স্বরেশবাবু ? বাবা —একটি সতেরো-আঠারো বৎসরের মেয়ে হঠাৎ ঘরে ঢুকিয়া পিতার কাছে একজন অপরিচিত যুবককে দেখিয়া স্তব্ধ হইয়া থামিয়া গেল । কে; অচলা ? এস মা ব’স । লজ্জ। কি মা ; ইনি আমাদের মহিমের পরম বন্ধু । মেয়েটি একটুখানি অগ্রসর হইয়া হাত তুলিয়া মুরেশকে নমস্কার করল । স্কুরেশ দেখিল, মেয়েটি উজ্জল খামবর্ণ, ছিপছিপে পাতলা গঠন । কপোল, চিবুক, ললাট— সমস্ত মুখের ডৌলটিই স্বত্র এবং মুকুমার। চোখ দুটির দৃষ্টিতে একটি স্থির-বুদ্ধির আভা । নমস্কার করিয়া সে অদূরে উপবেশন করিল। মুরেশ তাহার মুখের পানে চাহিয়া চক্ষের পলকে মুগ্ধ হইয়া গেল। তাহার পিতা বলিয়া উঠিলেন, মহিমের ব্যাপারটা শুনেচ মা ? আমরা ভেবে মরছিলাম, সে আসে না কেন ? ঐ শোন । ইনি পরম বন্ধু ব'লেই ত কষ্ট করে জানাতে এসেছিলেন, নইলে কি হ’ত বল ত ? কে জানত, সে এমন বিশ্বাসঘাতক, এমন মিথ্যাবাদী । তার পাড়াগাঁয়ে শুধু একটা মেটে ভাঙা-বাড়ি । তোমাকে খাওয়াবে কি—তার নিজেরই মোটা ভাত-কাপড়ের সংস্থান নেই। উঃ–কি ভয়ানক ! এমন লোকের মনের মধ্যেও এত বিষ ছিল, অ্যা ! } •