পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰন্থ शिनि ? অচলা চমকিয়া চাহিল। যে মেয়েটি একদিন 'রাক্ষসী বলিয়া নিজের পরিচয় দিয়া আর স্টেশনে নামিয়া গিয়াছিল, এ সেই । কাছে আসিয়া অচলার উদভ্ৰান্ত ও একান্ত শ্ৰীহীন মুখের প্রতি মুহূৰ্ত্তকাল দৃষ্টি রাখিয়া অভিমানের স্বরে কহিল, আচ্ছ দিদি, সবাই দেখচে স্বরেশবাবু ভাল হয়ে গেছেন ; ডাক্তার বলেচেন, আর এক বিন্দু ভয় নেই, তবু যে দিবারাত্র তোমার ভাবনা ঘোচে না, মুখে হাসি ফুটে না, এটা কি তোমার বাড়াবাড়ি নয় ? আমাদেরও কর্তারা আছেন, তাদের অম্বখবিমুখেও আমরা ভেবে সারা হই, কিন্তু মাইরি বলচি ভাই, তোমার সঙ্গে তার তুলনাই হয় না। অচলা মুখ ফিরাইয়া লইয়া শুধু একটা নিশ্বাস ফেলিল, কোন উত্তর দিল না। মেয়েটি রাগ করিয়া বলিল, ইস। ফোস করে যে কেবল দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে বড় ! বলিয়া কয়েক মুহূৰ্ত্ত অপেক্ষা করিয়া যখন অচলার নিকট হইতে কোনপ্রকার জবাব পাইল না, তখন তাহার একখানি হাত নিজের মুঠোর মধ্যে টানিয়া লইয়া অত্যন্ত করুণকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা স্বরমাদিদি, সত্যি কথা বলো ভাই, আমাদের বাড়িতে তোমার একদওও মন টিকচে না, না ? বোধ হয় খুব অস্থবিধে আর কষ্ট হচ্ছে, সত্যি না ? অচলা নদীর দিকে যেমন চাহিয়াছিল, তেমনি চাহিয়া রহিল ; কিন্তু এবার উত্তর দিল, কহিল, তোমার শ্বশুর আমার যে উপকার করেচেন, সে কি এ-জন্মে কখনো জুলতে পারবো ভাই ! মেয়েটি হাসিল ; কহিল, ভোলবার জন্যই যেন তোমাকে আমি সাধাসাধি করে বেড়াচ্চি। এবং পরক্ষণেই কৃত্রিম আহযোগের কণ্ঠে বলিল, আর সেজন্যই বুঝি তখন বাবার অত ডাকাডাকিতেও সাড়া দিলে না ? তুমি ভাবলে, বুড়ে যখন তখন— অচলা একান্ত বিস্ময়ে মুখ ফিরাইয়া বলিয়া উঠিল, না, এমন কখখনো হতে পারে না । স্বাক্ষুদী জবাব দিল, পারে না বৈ কি ! তবু যদি না আমি নিজে সাক্ষী থাকতুম ! ঠাকুরঘর থেকে আমার কানে গেল, সুরমা ! ও-মা স্বরম। এমন চার-পাঁচবার শুনলুম, বাবা ডাকচেন তোমাকে। পূজোর সাজ করছিলুম, একপাশে ঠেলে রেখে ছুটে এসে দেখি, তিনি সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন। সত্যি বলচি দিদি, তামাসা করচিনে । অচলাই শুধু মনে মনে বুঝিল, কেন বৃদ্ধের 'স্থরমা’ আহবান তাহার বিমনাচিত্তের দ্বার খুজিয়া পায় নাই। তথাপি সে লজ্জায় অস্থতাপে চঞ্চল হইয়া উঠিল। কহিল, বোধ হয় তাই, ঘরের মধ্যে— „»ፃቁ»