পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তাহা চোখে পড়িল কি-না বলা বঠিন ; কিন্তু সে মুখ টিপিয়া আবার একটুখানি হাসিয়া বলিল, আচ্ছা, কিছু দাও আর না দাও, যদি সত্য কথাটি বলতে পারি আমাকে কি খাওয়াবে বল অচলাদিদি । • অচলার নিজের নামটা নিজের কানে জলন্ত অগ্নিশিখার ন্যায় প্রবেশ করিল, এবং পরক্ষণ হইতেই সে একপ্রকার অৰ্দ্ধচেতন, অৰ্দ্ধ-অচেতনের মত শক্ত হইয়া বসিয়া রহিল। বীণাপাণি কহিতে লাগিল, আমাদের দুই বোনের কিন্তু তত দোষ নেই ভাই, দোষ যত আমাদের কৰ্ত্ত দুটির। একজন জরের ঘোরে তোমার সত্যি নামটি প্রকাশ করে দিলেন, আর অপরটি তণই থেকে তোমার সত্যি পরিচয়টি ভেবে বার ক’রে আনলেন । আচল প্রাণপণ-বলে তাহার বিক্ষুব্ধ বক্ষকে সংযত করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, সতি্যু পরিচয়টা কি শুনি ? বীণাপাণি বলিল, সত্যি হোক আর নাই হোক ভাই, বুদ্ধি যে তার আছে, সে কিন্তু তোমাকে মানতেই হবে । তিনি একদিন রাত্রে হঠাৎ এসে বললেন, তোমার অচলাদিদির কাগুটা জানো গো ? তিনি ঘর থেকে পালিয়ে এসেচেন। আমি রাগ করে বললুম, যাও, চালাকি করতে হবে না । এ-কথা দিদির কানে গেলে ইহজন্মে আর তিনি তোমার মুখ দেখবেন না। অচলা চেয়ারের হাতায় দুই মুঠ কঠিন করিয়া বসিয়া রহিল। বীণাপাণি কহিতে লাগিল, তিনি বলিলেন, মুখ আমার দেখুন আর নাই দেখুন, এ-কথা সত্যি, আমি দিব্যি করে বলতে পারি। জী-ননদের সঙ্গে ঝগড়া ক’রেই হোক, আর শ্বশুর-শাশুড়ীর সঙ্গে বনিবনাও না হওয়াতেই হোক, স্বামী নিয়ে তিনি বিবাগী হয়ে বেরিয়ে এসেচেন। স্বরেশবাবুর ত ভাব-গতিক দেখে মনে হয়, তোমার দিদি তাকে সমুদ্রে ভুবতে হুকুম করলেও তার না বলবার শক্তি নাই। তার পরে যেখানে হোক একটা ছদ্মনামে অজ্ঞাতবাসে দুটিতে থাকবেন, যতদিন না বুড়োবুড়ি পৃথিবী খুজে সেধে-কেঁদে তাদের বৌ-ৰেটাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এই যদি না আসল ঘটনা হয় ত তুমি আমাকে— আমি বললুম, আচ্ছ, তাই যেন হ’লো, কিন্তু গাড়িতে আমার মত একটা অপরিচিত মুখ্য মেয়েমানুষের কাছে মিথ্যে বলবার দিদির কি এমন গরজ হয়েছিল ? কর্তা তাতে হেসে জবাব দিলেন, তোমার দিদিটি যদি তোমার মত বুদ্ধিমতী হতেন, তা হলে হয়ত গরজই হ’ত না । কিন্তু তা তিনি মোটেই নয়! যেই শুনলেন, তোমার বাড়ি ডিহরীতে, তুমি দুদিন পরে ডিহরীতে যাবে, তখনই তিনি অচলার বদলে স্বরম, ডিহরীর বদলে জব্বলপুর-যাত্রী এবং হিন্দুর বদলে ব্রাহ্ম-মহিলা হয়ে • של