পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহদাহ ছায়াতেই বসে আছি-এর আবার দিন মাস বছর কি ! বলিয়া তিমি আবার একটু খামিলেন । , মৃণাল নিজেও কি যেন একটা বলিতে গেল, কিন্তু সহসা তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া সে একেবারে নির্বাক হইয়া রহিল। তাহার মনে হইল, এই বৃদ্ধের অন্তরের মধ্যে এতদিন ধরিয়া যে দুঃখের চিতা নীরবে জলিতেছিল, সে যেন কেমন করিয়া নিবিয়া আসিল বলিয়া ; এবং ইহারাই শেষ আভাসটুকু তাহার মুখের উপর ষে দীপ্তিপাত করিয়াছে, সেই মান আলোকে কোথাকার কোন মুগভীর স্নেহ যেন অসীম করুণায় মাখামাখি হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে। কিছুক্ষণ পৰ্য্যন্ত কেহই কোন কথা কহিল না-মৃণালের আনত দৃষ্টি মেবের উপর তেমনি স্থির হইয়া রহিল। এই নীরবতা কেদারবাবুই ভঙ্গ করিলেন। বলিলেন, মৃণাল, আমি এক ধৰ্ম্মত্যাগ করে যখন আর এক ধৰ্ম্মে দীক্ষা গ্রহণ করেচি, তখন বাইরের কাছে না হোক অন্ততঃ নিজের কাছেও একটা জবাবদিহির দায়ে পড়েচি । সেটা এতদিন কোনমতে এড়িয়ে গেছি বটে, কিন্তু আর বুঝি ঠেকাতে পারিনে। ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে এখন এই কথাটা যেন বুঝতে পারচি— পলকের জন্ত মৃণাল একটুখানি চোখ তুলিতেই কেদারবাৰু বলিয়া উঠিলেন, ভয় নেই মা, ভয় নেই, আমি বারংবার তোমার নাম উল্লেখ করে আর তোমাকে সঙ্কোচে ফেলব না, কিন্তু এতকাল পরে এই সত্যটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেচি যে, লড়াই-ঝগড়া বাদাবাদ করে আর যাকেই পাওয়া যাক না, ধৰ্ম্ম-বন্ধটিকে পাবার জো নেই। মৃণাল তাহার অস্তরের বাক্যটি অনুভব করিয়া ধীরে ধীরে কহিল, সে-কথা সত্যি হতে পারে বাবা, কিন্তু যে ধৰ্ম্মটি আমি ভাল বলে বুঝেছি, তাকে গ্রহণ করতে হলেই যে লড়াই-ঝগড়া বাদাবাদি করতে হবে, আমি ত তার কোন প্রয়োজন দেখতে পাইনে । কেদারবাবু বলিলেন, আমিও যে ঠিক একদিন পেয়েছিলুম তাও না। কিন্তু প্রয়োজন হয়ে পড়ে বৈ কি মৃণাল । কোন বস্তুকেই পরিত্যাগ ত আমরা ঐতির ভেতর দিয়ে, প্রেমের ভেতর দিয়ে করিনে ! যাকে ত্যাগ করে যাই, তার সম্বন্ধে সেই যে মন ছোট হয়ে থাকে, সে ত কোনকালেই ঘোচে না ; সেইজন্যই ত আজ মস্ত কৈফিয়তের দায়ে ঠেকেচি মা । কিন্তু তোমরা যা জন্ম থেকেই আপনা-আপনি অতি সহজেই পেয়েচ, সে ভাল হোক, মন্দ হোক, তাকেই অবলম্বন করে চলেচ। তফাতটা একটু চিন্তা করে দেখ দেখি ! মৃণাল মৌন হুইয়া রহিল, প্রতিবাদ করিবার মত জবাবটা সে সহসা খুজিয়া পাইল না । কেদারবাৰু নিজেই মুহূৰ্ত্তকাল স্তন্ধ থাকিয়া বলিলেন, মা ! আজ অনেকদিনের ३३ॐ