পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহদাই একজনের এই একাগ্র দৃষ্টি আর একজনের সন্নত দৃষ্টিকে যেন আকর্ষণ করিয়া তুলিল—কিন্তু পলকমাত্র। অচলা তৎক্ষণাৎ চোখ নামাইয়া লইয়া অত্যন্ত স্বত্ত্বকণ্ঠে অত্যন্ত লজ্জার সহিত কহিল, এদেশ থেকে ত সবাই পালিয়েছে—এখানকার কাজ যদি তোমার শেষ হয়ে থাকে ত বাড়ি, কিংবা আরও কত দেশ আছে—তুমি চল, ড়িহরীতে আর এক দণ্ড টিকতে পাচ্চিনে । সে আমার বেশি আর কে জানে ? বলিয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া স্বরেশ বালিশে মাথা দিয়া শুইয়া পড়িল এবং কিছুক্ষণ নিঃশব্দে স্থিরভাবে থাকিয়া ধীরে ধীরে বলিতে লাগিল, অনেক কষ্টে আজ সকালে দু'খানা চিঠি পাঠাতে পেরেচি। একখানা তোমাকে, আর একখানা মহিমকে । সে যদি না এর মধ্যে চলে গিয়ে থাকে ত নিশ্চয় আসবে, আমি জানি । শুনিয়া অচলা ভয়ে বিস্ময়ে চমকিয়া উঠিল, কহিল, তাকে কেন ? স্বরেশ তেমনি ধীরে ধীরে বলিল, এখন তাকেই আমার একমাত্র প্রয়োজন। ছেলেবেলা থেকে সংসারের মধ্যে অনেকদিন অনেক গ্রন্থিই পাকিয়েচি, আর তাদের খোলবার জন্তে এই মানুষটিকে চিরদিন আবগুক হয়েচে । তাই আজও তাকেই আমার ডাক দিতে হয়েচে । এওঁ ধৈৰ্য্য পৃথিবীতে আর ত কারও নেই। অচলার বুকের মধ্যে তোলপাড় করিতে লাগিল, কিন্তু সে অধোমুখে স্থির হইয়া শুনিতে লাগিল । মুরেশ বলিল, আমার চিঠির মধ্যে প্রায় সব কথাই লেখা আছে—পড়লেই টের পাবে। সেদিন তোমার হাতে আমার সমস্ত সম্পত্তির পাকা উইলখানাই দিয়েছি। ইচ্ছে করলে তার অনেক জিনিষই তুমি নিতে পারে, কিন্তু আমি বলি, নিয়ে কাজ নেই। বরঞ্চ আমি বেঁচে থাকলেও যেমন গরীব-দুঃখীরাই সমস্ত পেতো, আমার মরণের পরেও যেন তারাই পায়। আমার কিছুর সঙ্গেই আর তুমি নিজেকে জড়িয়ে রেখ না অচলা—তুমি নিশ্চিন্ত হও, নিৰ্ব্বিগ্ন হও—আমার সমস্ত ংস্রব থেকে তুমি নিজেকে যেন সৰ্ব্বোতোভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। চেষ্টা করলে পৃথিবীতে অনেক দুঃখই সহা যায়—আমার দেওয়া দুঃখই যেন একদিন তুমি অনায়াসে সইতে পারে । তাহার আচরণে ও কথা বলার ভঙ্গিতে অচলার মনের মধ্যে আসিয়া পৰ্য্যন্তই কেমন যেন ভয় ভয় করিতেছিল ; এই শেষের কথাটায় সে যথার্থই ভীত হইয়া বলিয়া উঠিল, তুমি ও কথা তুলচ কেন ? উঠে ব’স না ! যাতে আমরা এখনি বার হয়ে পড়তে পারি, তার উদ্যোগ করে দাও না । তাহার আশঙ্কা ও উত্তেজনা লক্ষ্য করিয়াও স্বরেশ কোন উত্তর দিল না । যে বৃদ্ধ খুটি ঠেল দিয়া ঝিমাইতেছিল, সে সজাগ হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, বাৰু, এখন ঘরের মধ্যে যাবেন, না জালোটা বাইরে এনে দেব—তাহারও কোন জবাব দিল & 32 १५-७३