পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কি রঘুবীর ? বলিয়াই যাহার সহিত তাহার চোখে চোখে দেখা হইয়া গেল, সে মহিম। একবার সে কঁপিয়া উঠিয়াই দৃষ্টি অবনত করিল। স্বারের কাছে মুহূৰ্ত্তের জন্ত মহিমের পা উঠিল না, এখানে এমন করিয়া ষে আবার তাহার সহিত দেখা হইবে, ইহা সে প্রত্যাশ করে নাই। কিন্তু পরক্ষণেই ধীরে ধীরে সে কাছে আসিয়া দাড়াইল । অত্যন্ত মুম্বকণ্ঠে প্রশ্ন করিল, এখন স্বরেশ কেমন আছে ? o অচলা মুখ তুলিল না, কথা কহিল না, শুধু মাথা নাড়িয়া বোধ হয় ইহাই জানাইতে চাহিল, সে ইহার কিছুই জানে না। মিনিট-খানেক স্থির থাকিয়া মহিম মুরেশের ললাট স্পর্শ করিতেই সে চোখ মেলিয়া চাহিল। সেই জ্যোতিহীন রক্তনেত্রের প্রতি চাহিয়া মহিমের গল দিয়া সহসা স্বর ফুটিল না। তার পরে কহিল, কেমন আছ স্বরেশ ? ভালো না-চললুম। তুমি আসবে আমি জানি-আমার স্বমুখে এসে ব’ল । মহিম উঠিয়া গিয়া শয্যার একাংশে তাহার পায়ের কাছে বসিল। বলিল, ডিহরীতে ডাক্তার অাছে, আমার এক্কায় কোনমতে— স্বরেশ মাথা নাড়িয়া বলিল, না, টানা-টানি ক’রো না, মজুরী পোষাবে না। আমাকে quietly যেতে দাও । কিন্তু এখনো ত— হ্যা, এখনো হ’স আছে, কিন্তু মাঝে মাঝে ভুল হচ্ছে। আমার জীবনটা গরীবদুঃখীর কাজে লাগাতে পারলুম না, কিন্তু সম্পত্তিটা যেন তাদের কাজে লাগে মহিম। তাই কষ্ট দিয়ে এতদূর তোমাকে টেনে এনেচি, নইলে মৃত্যুকালে ক্ষমা চেয়ে কাব্য করবার প্রবৃত্তি আমার নেই। মহিম নীরব হইয়া রহিল। স্বরেশ বলিতে লাগিল, ও-সব আমি বিশ্বাসও করিনে, ভালও বাসিনে। একটা দিনের ক্ষমার প্রতি আমার লোভও নেই। ভাল কথা, একটা উইল আছে। অচলাকে আমি কিছুই দিইনি—আর তাকে অপমান করতে আমার হাত উঠল না। তবে দরকার বোঝ ত সামান্ত কিছু দিয়ে । মহিম ব্যাকুল হইয়া উঠিল, আর আমাকে কেন এর মধ্যে জড়াচ্চো স্বরেশ ? স্বরেশ বলিল, ঠিক এই জন্যই যে, তোমাকে জড়ানো যায় না। যার লোত নাই, যার ফায়ান্তায়ের বিচার-হঠাৎ উপরের দিকে দৃষ্টি তুলিয়া কহিল, কিন্তু সারারাত তুমি বসে আছ অচলা - যাও, হাত-মুখ ধোও গে। মুনিয়ার মা সমস্ত দেখিয়ে দেবে—যাও— সে উঠিয়া গেলে কহিল, কেবল একটা জিনিসের জঙ্ক আমার ভারি ছুঃখ হয়। ३€ 8