পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভিতর হইতে জলিয়া উঠিল, তখন সে ঐখানে দাড়াইয়াই ভস্মসাৎ হইল—এতটুকু অগ্নিস্ফূলিঙ্গ সংসারে ছড়াইতে পাইল না। কিন্তু আজ তাহার শক্তির ডাক কেবল সহিবার জন্তে পড়ে নাই—সামঞ্জস্ত করিবার জন্ত পড়িয়াছে। আজ একবার তাহার জম-খরচের খাতাখানা না মিলাইয়া দেখিলে আর চলিবে না। কোথাও এক নির্জন স্থান আজ তাহার চাই-ই চাই । বাটীতে পৌছিয়া নিজের জিনিসপত্রগুলা সে তাড়াতাড়ি গুছাইয়া লইল, পাচটার ট্রেনের আর ঘণ্টাখানেকমাত্র সময় আছে। রামবাবুর কাশী হইতে ফিরিতে সম্ভবতঃ বিলম্ব হইবে, কারণ যথার্থই তিনি প্রায়শ্চিত্ত করিতে গিয়াছেন এবং তাহার পূৰ্ব্বে জলস্পর্শ করিবেন না বলিয়া গিয়াছেন। সুতরাং তাহার সহিত দেখা করিয়া বিদায় লওয়া চলে না। এই কৰ্ত্তব্যটা সংক্ষিপ্ত পত্রে শেষ করিয়া দিতে সে কাগজকলম লইয়া বসিল । দুই-এক ছত্র লিখিয়াই তাহার সেই ক্রুদ্ধ মুখের উগ্র উত্তপ্ত বিদ্ধপগুলাই তাহার মনে হইতে লাগিল ; এবং ইহারই সহিত আর এক-জনের অশ্রুজলে অস্পষ্ট অবরুদ্ধ কণ্ঠস্বরের কাতর প্রার্থনাও তাহার কানে আসিয়া পৌছিল। তন্ত্রার মধ্যে বেদনার স্তায় এতক্ষণ পৰ্য্যন্ত ইহা তাহার চৈতন্তকে সম্পূর্ণ জাগ্রত রাখিয়াও রাখে নাই, ঘুমাইয়া পড়িতে দেয় নাই, কিন্তু রামবাবুর সেই কথাগুলো যেন ধাক্কা মারিয়া চমক ভাঙিয়া দিল । এই প্রাচীন ব্যক্তির সহিত তাহার পরিচয় বেশিদিনের নয়, কিন্তু ইহার দয়া, ইহার দাক্ষিণ্য, ইহার ভদ্রত, ইহার অকপট ভগম্ভক্তি ও ধৰ্ম্মনিষ্ঠার অনেক কাহিনী সে শুনিয়াছে—এইগুলি এখন অকস্মাৎ তাহার রুদ্ধ চক্ষুতে যেন একটা সম্পূর্ণ অপরিদৃষ্ট দিক নির্দেশ করিয়া দিল । এই বৃদ্ধ অচলাকে তাহার মুরমা-মা বলিয়া, কন্যা বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। এই মেয়েটি ভিন্ন তিনি কখনো কোন পরগোত্ৰীয়ার হাতে অল্প স্পর্শ করেন নাই, ইহাও মহিমের কাছে স্নেহচ্ছলে গল্প করিয়াছেন, স্বতরাং সৰ্ব্বনাশটা যে তাহার কোন দিক দিয়া পৌঁছিয়াছিল, ইহা অনুমান করা মহিমের কঠিন নয় ; কিন্তু এখন এই কথাটাই সে মনে মনে বলিতে লাগিল, অচলার অপরাধের বিচার না হয় পরে চিন্তা করিবে, কিন্তু এই আচার-পরায়ণ ব্রাহ্মণের এই ধৰ্ম্ম কোন সত্যকার ধৰ্ম্ম, যাহা সামান্ত একটা মেয়ের প্রতারণায় এক নিমিষে ধূলিসাং হইয়া গেল, ষে ধৰ্ম্ম অত্যাচারীর আঘাত হইতে নিজেকে এবং অপরকে রক্ষা করিতে পারে না, বরঞ্চ তাহাকেই মৃত্যু হইতে বাচাইতে সমস্ত শক্তি অহরহ উষ্ঠত রাখিতে হয়, সে কিসের ধর্থ, এবং মানবজীবনে তাহার প্রয়োজন কোনখানে ? যে ধৰ্ম্ম স্নেহের মৰ্য্যাদা রাখিতে দিল না, নিঃসহায় আৰ্ত্ত নারীকে মৃত্যুর মুখে ফেলিয়া যাইতে এতটুকু দ্বিধা-বোধ করিল না । আঘাত খাইয়া যে ধৰ্ম্ম এতবড় স্নেহশীল বৃদ্ধকেও এমন চঞ্চল প্রতিহিংসায় এরূপ १●३