পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিন্দুর ছেলে বিন্দু দোর খুলিয়া দিল ; তিনি অমূল্যকে সঙ্গে করিয়া ঘরে ঢুকিয়াই বলিলেন, ঢের হারামজাদ ছেলে দেখেচি ছোটবোঁ, এমনটি দেখিনি। রাত্তির দুটো বাজে, একবার চোখে পাতায় করতে দিলে না। এই বলে মশা কামড়াচ্চে,এই বলে জল খাব, বলে বাতাস কর—না ছোটবোঁ, আমি সমস্তদিন খাটি-খুটি, রাত্ৰিতে একটু ঘুমোতে না পেলে ত বাচি নে । বিন্দু হাসিয়া হাত বাড়াইতেই অমূল্য তাহার ক্রোড়ের ভিতর গিয়া চুকিল এবং বুকের উপর মুখ রাখিয়া এক মিনিটের মধ্যে ঘুমাইয়া পড়িল । মাধব ওদিকে বিছানা হইতে পরিহাস করিয়া কহিল, সখ মিটল বৌঠান ? অন্নপূর্ণ বলিলেন আমি সখ করিনি ভাই, ইনিই নিজেই মায়ের ভয়ে ওখানে গিয়ে ঢুকেছেন। তবে আমারও শিক্ষা হ’ল বটে। আর কি ঘেন্নার কথা ঠাকুরপো, আমাকে বলে কি না তোমার কাছে শুতে লজ্জা করে । তিনজনেই হাসিয়া উঠিল। অন্নপূর্ণ বলিলেন, আর না, যাই একটু ঘুমোই গে, বলিয়া চলিয়া গেলেন । দিন-শেক পরে বিন্দুর বাবা-মা তীর্থযাত্রার সঙ্কল্প কৃরিয়া মেয়েকে একার দেখিবার জন্য পালকি পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। বিন্দু বড় জায়ের অনুমতি লইয়া দু-তিন দিনের জন্য অমূল্যকে লুকাইয়া বাপের বাড়ি যাইবার জন্ত উদ্যোগ করিতেছিল, এমন সময় বই বগলে করিয়া ইস্কুলের জন্য প্রস্তুত হইয়া অমূল্য আসিয়া উপস্থিত হইল। অনতিপূৰ্ব্বে সে বাহিরের পথের ধারে পাৰী দেখিয়া আসিয়াছিল ; এখন হঠাৎ পায়ের দিকে নজর পড়িতেই সে থমকিয়া দাড়াইয়া পড়িয়া বলিল, পারে আলতা পরেচ কেন ছোটমা ? অন্নপূর্ণ উপস্থিত ছিলেন, হাসিয়া ফেলিলেন। বিন্দু বলিল, আজ পরতে হয়। অমূল্য বার বার আপাদ-মস্তক নিরীক্ষণ করিয়া বলিল, গায়ে এত গয়না কেন ? অন্নপূর্ণ মুখে"াচল দিয়া বাহির হইয়া গেলেন। বিন্দু হাসি চাপিয়া বলিল, কবে তোর বে এসে পরবে বলে, আমাদের কাউকে কিছু পরতে নেই রে । বা, ইস্থলে বা। অমূল্য কথা কানে না তুলিয়া বলিল, দিদি অত হাসচে কেন ? আমি ত আজ ইস্থলে যাব না—তুমি কোথায় যাবে ? বিন্দু বলিল, তাই যদি যাই, তোর হুকুম নিতে হবে নাকি ? আমিও যাব, বলিয়া সে বই লইয়া চলিয়া গেল । R৯১