পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মাষ্টার কহিল, তা জানি না, কিন্তু সেও ছিল। এ-বাড়ির নরেনবাবুও ছিল, আরও তিন-চারজন ইস্কুলের বদমাস ছেলে ছিল ! এই কথা আমি হেডমাষ্টার মশায়ের কাছে শুনেচি । বিন্দু বলিল, টাকাও আদায় হয়ে গেছে ? আজ্ঞে হা, তাও শুনেচি । আচ্ছা—আপনি যান। বলিয়া বিন্দু সেইখানেই বসিয়া রহিল। তার মুখ দিয়া শুধু আফুটে বাহির হইল, আমাকে না জানিয়ে টাকা দিলে, এত সাহস এ-বাড়িতে কার ? একে তাহার মন খারাপ, তাহাতে দিদির সহিত কথাবার্তা বন্ধ, তাহার উপর এই সংবাদ বিন্দুকে হিতাহিতজ্ঞানশূন্ত করিয়া তুলিল । সে উঠিয়া গিয়া রান্নাঘরে ঢুকিল। অন্নপূর্ণ রাত্রির জন্য তরকারী কুটিতেছিলেন, মুখ তুলিয়া ছোটবৌয়ের মেঘাচ্ছন্ন মুখের দিকে চাহিয়া দেখিলেন। বিন্দু কহিল, দিদি, এর মধ্যে অমূল্যকে টাকা দিয়েচ ? অন্নপূর্ণ ঠিক এই আশঙ্কাই করিতেছিলেন, ভয়ে তাহার গলা কাঠ হইয়া গেল ; মৃদ্ধস্বরে বলিলেন, কে বললে ? বিন্দু বলিল, সেটা দরকারী কথা নয়—দরকারী কথা, সেই বা কি বলে নিলে, আর তুমিই বা কি বলে দিলে ? অন্নপূর্ণ নিস্তব্ধ হইয়া রহিল । বিন্দু বলিল, তুমি চাও না যে, আমি তাকে শাসন করি, সেইজন্যই আমাকে লুকিয়েচ। অমূল্য আর যাই করুক, মিথ্যে কথা গুরুজনের কাছে বলবে না, তুমি জেনে-শুনে দিয়েচ, সত্যি কি না ? অন্নপূর্ণ আস্তে আস্তে বলিলেন, সত্যি, কিন্তু এইবারটি তাকে মাপ কর বোন, আমি মাপ চাচ্ছি । বিন্দুর বুকের ভিতর পুড়িয়া যাইতেছিল, বলিল, একটিবার । আজ থেকে চিরকালের জন্তেই মাপ করলুম। আর বলব না। আর কথা ক’ব না । সে ষে এমনি করে চোখের সামনে একটু একটু করে উচ্ছন্ন যাবে, তা সইতে পারব না— তার চেয়ে একেবারে যাক। কিন্তু তোমার কি আম্পৰ্দ্ধা ! শেষ-কথাটা অন্নপূর্ণাকে তীক্ষভাবে বিধিল, তথাপি তিনি নিরুত্তরে বসিয়া রহিলেন । কিন্তু বিন্দু যত বকিতেছে, তাহার ক্রোধ উত্তরোত্তর ততই বাড়িতেছিল। সে পুনরায় চেচাইয়া বলিল, সব কথায় তুমি স্তাকা সেজে বল, এইবারটি মাপ কর, কিন্তু দোষ তার তত নয়, যত তোমার । তোমাকে আমি মাপ করব না । . বাটীর দাসী-চাকরেরা আড়ালে দাড়াইয়া শুনিতেছিল। অন্নপূর্ণার জার সহ হইল না, তিনি বলিলেন, কি করবি-ফাসি দিবি ? :

  • 2*